শুভেচ্ছা, উন্নত বিশ্ব থেকে আমরা ভাল অনেক কিছু পেয়েছি? আমাদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, লাইফস্টাইল কিংবা টেকনোলজির প্রায় বেশিরভাগই সেখান থেকেই পাওয়া। এমন অনেক ভালোর সাথে, আবার বেশ কিছু খারাপও আমরা, ধীরে ধীরে নিয়ে নিচ্ছি কিংবা অভ্যস্ত হচ্ছি। আপনারা কি বলতে পারেন উন্নত বিশ্ব থেকে সবচেয়ে খারাপ কী পেয়েছি আমরা?
আমার ধারণা উন্নত দেশ থেকে যতগুলি খারাপ ব্যাপার আমরা গ্রহণ করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ধারণাটি হলো ‘বৃদ্ধাশ্রম’।
কথার ব্যাখ্যায় যাবার আগে, আসেন একটা ছোট্ট থট এক্সপেরিমেন্ট করি। না না, ভয়ের কিছু নেই। আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না, শুধু এক মিনিট চোখ বুজে কল্পনা করুন, এখন থেকে বিশ,ত্রিশ বা চল্লিশ বছর পর, মানে যখন আপনার অনেক বয়স হবে, এখনকার মতো আর কাজ করতে পারেন না, শারিরীক সক্ষমতাও এখনকার মত আর নেই, তার মানে আপনি অবসর জীবনে প্রবেশ করেছেন আর ভাবছেন, এখন ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি নিয়ে নিশ্চিন্তে বাকি জীবনটা কাটাবেন, ঠিক তখনই আপনার ছেলে, কিংবা মেয়ে, আপনাকে নিয়ে একটা অজানা অচেনা, নার্সিং হোমে রেখে এলো। সেখানে আপনাকে দেখাশোনা করার জন্য হয়তো দক্ষ লোক আছে, অসুস্থ হলেই ডাক্তার আছে, নিয়মিত সঠিক খাবার তদারকির জন্য ডায়েটেশিয়ান আছে, কিন্তু তারপরও কি আপনি থাকতে চাইবেন সেখানে? আসেন এবার একটু চোখটা খুলি। থট এক্সপেরিমেন্ট যাদের জন্য কঠিন হয়ে গেলো, কিংবা যারা এখনো ভাবতেও পারেন নি ব্যাপারটা ঠিক কেমন, তাদের জন্য এই ভিডিওঃ
আপনি কি জানেন, পৃথিবীর সব থেকে সেরা সুবিধা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে ফিনল্যান্ডে, এমন কোন সুযোগ সুবিধা নাই যেটা সেখানে পাওয়া যায় না। কিন্তু সবকিছু থাকার পরেও, একটা জিনিস পৃথিবীর সেরা বৃদ্ধাশ্রমেও নেই, সেটি হলো পরিবার। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী এমনকি নিজের পুরোনো ফার্নিচারগুলোর প্রতিও মানুষের যে মায়া, বৃদ্ধাশ্রমে সেই মায়াটা নেই। আর পুরো একটা জীবন পার করে দেবার পর এই মায়ার বাঁধন ফেলে, অজানা অচেনা কোন নার্সিং হোমে ফেলে আসার ব্যাপারটা যে চুড়ান্ত অমানবিক, এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এতক্ষণে!
তবে বৃদ্ধাশ্রমের ভাল দিকও আছে। সেটাতে যাবার আগে প্রথমে বলে নেই, এই “বৃদ্ধাশ্রম” ধারণাটা এলো কোথা থেকে।
পৃথিবীতে প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। গৃহহারা অসহায় বয়স্কদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয়, চীনের সবথেকে প্রাচীন শান রাজবংশ। তবে ইউরোপিয়ানদের দাবী, সবচেয়ে পুরোনো ওল্ড এইজ হোম বা বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করেন, রাজা এথেলস্টান- গ্রেট ব্রিটেনের ইয়োর্ক শহরে। আর সবচেয়ে পুরোনো ওল্ড হোমগুলির ভেতর এখনো টিকে আছে উইনচেস্টারের সেন্ট ক্রস হসপিটাল।
ভারতের মাদ্রাজে ১৮৪০ এ প্রথমবারের মতো এমন অসহায় বৃদ্ধদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে “দ্য ফ্রেন্ড ইন নিড সোসাইটি”। আর বাংলায় প্রথম বৃদ্ধাশ্রম গড়ে ওঠে ১৮৮২ সালে কোলকাতায়- যার নাম ছিল “দ্য লিটল সিস্টারস অফ দ্য পুওর”।
বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা প্রবর্তন হয় ডা. এ. কে. এম আবদুল ওয়াহেদের হাত ধরে। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন এবং পরে ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি অনুদানে হাসপাতাল ও হোম ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর শিশু পরিবারের সাথে একই জায়গায় বয়স্কদের থাকার ব্যবস্থা করেছে, এ ছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করে। সারা বাংলাদেশে সরকারি বৃদ্ধাশ্রম মাত্র আটটি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বাগেরহাট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও লালমনিরহাট জেলায় এসব শান্তি নিবাসগুলো অবস্থিত।
এখন আপনাদের কাছে মনে হতে পারে হঠাৎ করে আমি এই ইতিহাস কেন টানলাম? প্রাচীন সবগুলি বৃদ্ধাশ্রমের তৈরি হওয়ার পেছনেই যে কমন ব্যাপারটি আছে সেটি হলো- অসহায়, পরিবার পরিজনহীন, অসমর্থ্য বয়স্ক মানুষদেরকে সেবা দেয়া। এগুলোর নামগুলি লক্ষ্য করলে ব্যাপারটা আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবে। তার মানে হলো আধুনিক বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা আর প্রাচীন বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা একেবারেই কিন্তু এক নয়।
এবার আসুন দেখি আধুনিক বিশ্বে বৃদ্ধাশ্রমের অবস্থা কি?
সারা পৃথিবী জুড়েই বৃদ্ধাশ্রম বা এল্ডারলি কেয়ারের কন্সেপ্টটি প্রচলিত। একেক দেশের এল্ডারলি কেয়ার সিস্টেম একেক রকম। সার্বিক বিবেচনায় নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, কানাডা, জাপান এবং ইউএসএর এল্ডারলি কেয়ার সিস্টেম বা বৃদ্ধাশ্রমগুলি সবচেয়ে সেরা। এই যে বলতেছি এরা সেরা- এরা কিসের ভিত্তিতে সেরা? হেলথ কেয়ার ইনডেক্স স্কোর, ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট স্কোর এবং সেইফটি ইনডেক্স স্কোরের ভিত্তিতে। চলে যাবেন না- কঠিন কঠিন শব্দ না বলে চলুন সোজা কথায় বলি, এসব দেশ তাদের বয়স্ক মানুষকে জন্য অনেক ধরণের সুবিধা দিয়ে রেখেছে- যেমন বয়স্কভাতা কিংবা পেনশন, ভাল নার্সিং ফ্যাসিলিটিজ এবং থাকার উন্নত পরিবেশ থাকার ব্যবস্থা। তবে এই ব্যাপারটাও কিন্তু একেক দেশে একেক রকম। একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
বয়স্কদের ব্যাপারে সবচেয়ে সেন্সিটিভ হচ্ছে নরওয়ে। এই দেশটিতে বয়স্কদের জন্য শতভাগ পেনশন সুবিধাসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।
নরওয়ের পরেই রয়েছে সুইডেন। এখানে বয়স্কদের থাকার জন্য কোন ধরণের টাকা পয়সা লাগে না। বরং সরকার থেকেই এদের সকল ব্যায়ভার বহন করা হয়। সুইডেনের মতই অবস্থা সুইজারল্যান্ডেও। এ কারণে এই তিনটি দেশই এল্ডারলি কেয়ারে সবার উপরের অবস্থানে।
এই তিনটি দেশের পরেই রয়েছে জার্মানি, কানাডা এবং ইউএসএ।
জাপানের সিস্টেমটা কিন্তু অনেকটাই আলাদা। জাপান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বুড়োদের দেশ। এই দেশের ৩৮ পার্সেন্ট মানুষের বয়স ৬৫ বা তারও ওপরে। বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনার জন্য জাপান সরকারের বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং সিস্টেম আছে। এদের ভেতর একটা সিস্টেমের নাম হলো ফুরেয়াই কিপ্পু। (Fureai Kippu)। এটা হলো এক ধরণের টিকেট সিস্টেম। আপনি যদি এক ঘন্টা কোন বয়স্ক মানুষকে সেবা দেন, তাহলে আপনার অ্যাক্যাউন্টে ক্রেডিট জমা হবে। এই ক্রেডিট দিয়ে সত্যিকার টাকার মতোই আপনি সব ধরণের কেনাকাটা করতে পারবেন। এই ধরণের ক্রেডিট সিস্টেম থাকার ফলে জাপানের তরুণ জেনারেশন সহ মধ্যবয়সী অনেক মানুষই বয়স্কদেরকে সেবা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে। ব্যাপারটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং- আপনি আপনার দাদা- দাদী, নানা- নানীর সাথে সময় কাটানোর বিপরীতে সরকার আপনাকে আবার টাকাও দিচ্ছে! বিষয়টা মজার না!
জাপানের দেখাদেখি এই সিস্টেমটা নেদারল্যান্ডেও আছে। তবে একটু অন্যভাবে। নেদারল্যান্ডস এ ইউনিভার্সিটির হল গুলি মানে ছাত্র ছাত্রিদের থাকার জায়গাগুলি করা হয় কোন না কোন ওল্ড এইজ হোম বা বৃদ্ধাশ্রমের আশেপাশে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা চাইলেই বয়স্কদেরকে সেব দিতে পারে। আর কোন ছাত্র মাসে ৩০ ঘন্টা বয়স্কদেরকে সেবা দিলেই তাদের হোস্টেলে থাকা-খাওয়া ফ্রি। ভেবে দেখেছেন- একটা দেশ তাদের বয়স্ক নাগরিকদের ব্যাপারে কতটা ভাবলে এমন চমৎকার সিস্টেম বের করতে পারে?
তবে ইউএসএর গল্পটা এদের মত না। যেসব দেশের কথা বললাম সেসব দেশে বেশিরভাগ এল্ডারলি কেয়ার ফ্যাসিলিটিজগুলোই সরকার বা কমিউনিটি ফান্ডেড হলেও ইউএসএর হিসাব আলাদা। এখানে ফ্যালো কড়ি মাখো তেল ব্যবস্থা। তার মানে আপনার যদি অনেক টাকা থাকে তবে ইউএসএতে শেষ বয়সটা বেশ শান্তিতেই কাটবে আপনার- কিন্তু যদি তা না থাকে তাহলে বৃদ্ধ বয়সটা সেখানে না কাটানোই ভাল।
যেসব প্যারামিটারের কথা বললাম, সেই প্যারামিটারে গ্রেট ব্রিটেন আছে ১৫ নাম্বারে। যদিও ব্রিটিশ সরকার বয়স্কদের জন্য আলাদা হোমের পরিবর্তে তাদের পরিবারেই কিভাবে ভাল রাখা যায় সেই চেষ্টাই করছে। ব্রিটিশ সরকারেরও একটা মজার সিস্টেম আছে, তাদের বয়স্কদেরকে দেখভাল করার জন্য। আগেই বলেছি ব্রিটিশ সরকার ওল্ড এইজ হোমের বদলে তাদের বয়স্ক মানুষেরা যেন পরিবারের সাথেই থাকতে পারে সেদিকে বেশি আগ্রহী। এ কারণে বয়স্কদের জন্য আলাদা ভাতার ব্যবস্থা তো তারা করেই, পাশাপাশি প্রতিটা স্কুলে প্যারেন্টস ডে তে বাবা মা এর পাশাপাশি দাদা-দাদী, নানা-নানীকেও নিয়ে যাওয়াকে উৎসাহ দেয়া হয়। এতে করে বাচ্চাদের স্কুলিং এর কথা ভেবে হলেও বুড়ো বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার প্রবণতা কমে যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, এই প্যারামিটারে আমাদের এশিয়ার বা দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা কোথায়?
তার আগে বলে রাখি, ইউরোপ – আমেরিকার সাথে এশিয়ার একটা বিশাল কালচারাল ডিফারেন্স আছে। সেটা হলো ইউরোপ- আমেরিকায় সন্তান আঠারো বছর হলেই তাদেরকে নিজের পায়ে দাড়ানোর বা স্বনির্ভর হবার একটা তাড়না দেয়া হয়। ফলে সন্তানেরা আঠারো হলেই অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই আলাদা থাকতে শুরু করে। সন্তানের জন্য জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত খেটে যাবার আমাদের যে প্রবণতা আছে সেটা ইউরোপ আমেরিকার পিতা-মাতার ভেতর নাই। আবার অন্যদিকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থাকার কারণে বাবা-মায়েরাও বুড়ো বয়সে ছেলেমেয়েদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চান না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বয়স্করা নিজেদের স্বার্থেই নিজ ইচ্ছাতেই এল্ডারলি কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ গুলিতে থাকতে যান। কিংবা যেহেতু তাদের সন্তানদেরকে অনেক আগেই ঘরছাড়া করে দেয়া হয়েছে- তাই শেষ বয়সে বরং তারা নিজেদের মত থাকার জন্য আরামদায়ক ওলড এইজ হোমগুলিকেই বেশি পছন্দ করেন।
এবার আসা যাক এশিয়ার প্রসঙ্গে। এশিয়াতে বয়স্কদের জন্য সবথেকে আরামদায়ক দেশ হলো তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। এই তিনটি দেশের মানুষ তাদের বয়স্কদের প্রতি খুবই সেন্সিটিভ এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তাদেরকে পরিবার ত্যাগ করে এল্ডারলি ফ্যাসিলিটিজ গুলিতে যেতে হয় না। ফলে বয়স্ক মানুষদের জন্য উত্তম থাকার দেশ হিসেবে এই তিনটি দেশই খুবই চমৎকার। যে মাপকাঠির কথা বলছি তাতে সৌদি আরব রয়েছে ৩৩তম অবস্থানে, রাশিয়া ৬৩, পাকিস্তান এবং ভারত যথাক্রমে ৭৬ আর ৭৭ নাম্বারে। আর বাংলাদেশ? ৯০ টি দেশের ভেতর ৮৮ নম্বরে। তবে আশার কথা হলো, ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস করা হয় পিতা-মাতা ভরণপোষণ বিল-২০১৩। এই আইন অনুসারে সন্তানদের অবশ্যই পিতামাতার দায়দায়িত্ব নিতে হবে, ভরণপোষণ থেকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা – সকল কিছুর খোঁজখবর রাখতে হবে। অন্যথায় সন্তানদের জন্য জেল-জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়- জেল জরিমানা করে কি কাউকে নিজের বাবা মা এর দেখাশোনা করতে বাধ্য করা আদৌ সম্ভব?
শুরু করেছিলাম প্রাচীন বৃদ্ধাশ্রম আর বর্তমান সময়ের তুলনা দিয়ে। এতক্ষণ ধরে যে উদাহরণ তুলে ধরলাম তাতে অন্তত আপনাদের কাছে পরিস্কার যে ইউরোপ বা আমেরিকার বৃদ্ধাশ্রমগুলির সাথে আমাদের তুলনা করে লাভ নেই- পরিবার এবং সাংস্কৃতিকভাবে আমরা আলাদা তো বটেই- অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের আকাশ পাতাল ফারাক। তাই যারা ইউরোপ আমেরিকার উদাহরণ দিয়ে আমাদের বৃদ্ধাশ্রমকে জাস্টিফাই করতে চান তাদেরকে এই যুক্তিটা চাইলে দিতেই পারেন।
যে কথা বলছিলাম, বৃদ্ধাশ্রমের ধারণাটা খারাপ না- কারণ এর মূল লক্ষ্য ছিল অসহায়, দরিদ্র এবং সন্তানহীন বয়স্ক মানুষকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একটু ভাল রাখার ব্যবস্থা। কিন্তু এই বর্তমান সময়ে এসে সেটা কি দাড়াচ্ছে? বুড়ো বাবা মা কে বোঝা মনে করে তাদেরকে নিজেদের জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা। হ্যাঁ, অনেকেই যুক্তি দিতে পারেন যে তারা অনেক ব্যস্ত এবং তাদের পক্ষে বাবা মাকে দেখভাল করা সম্ভব নয় বলে তারা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থেকে যায়- আমরা যতই ব্যস্ত হই না কেন, যতদূরেই থাকি না কেন, আমরা কি আমাদের সন্তানদেরকে কোন চাইল্ড হোমে রেখে আসি? আসি না তো। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের অফিসের সময়টুকু সন্তানকে ডে কেয়ার সেন্টারে দেই, আবার অফিস শেষ করে তাদেরকে আবার আমাদের সাথে নিয়েই ঘরে ফিরি। তাহলে আমাদের বাবা মায়ের বেলায় কেন আমরা তাদেরকে একেবারে রেখে চলে আসতে চাই? উত্তরটা কী হবে?
শুরু করেছিলাম যে জায়গা থেকে সেই কথাতে ফিরে আসি- উন্নত দেশ থেকে অনেক ভাল ভাল ব্যাপার আমরা নিয়েছি, সাথে বেশ কিছু খারাপও পেয়েছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধাশ্রম তেমনই। অসহায়, অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল এবং সন্তানহীন বয়স্কদের জন্য বাংলাদেশে সরকারিভাবে বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে – এগুলির প্রয়োজন অবশ্যই আছে, কিন্তু নিজেদের জীবনকে বোঝামুক্ত করতে যেসব সন্তান তাদের বয়স্ক বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসছেন তাদেরকে বোঝানো প্রয়োজন- বাবা মা- তারা যত বয়স্কই হোক না কেন- বাবা মাই থাকে- বোঝা হয়ে যান না।
আর যারা মনে করছেন যে তারা বাবা মাকে তারা ঠিকভাবে দেখভাল করতে পারছেন না এবং বৃদ্ধাশ্রম বা নার্সিং হোম তাদেরকে সঠিকভাবে সেইসব ছেলে-মেয়েকে বোঝানো জরুরি যে “নাথিং কমপেয়ারস টু হোম” । আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের বয়স্ক বাবা মায়েরা আমাদের সন্তানের মতই। আমরা আমাদের সন্তানের সাথে যা করি না বা করতে পারি না – আমাদের বাবা মা’র সাথেও সেটা করা উচিত নয়। আমাদের মনে রাখা উচিত – একদিন আমাদেরও বয়স হবে। আমাদের সন্তানেরা কিন্তু আমাদেরকে দেখেই শেখে। কেমন হবে যদি আমাদের মতো ওরাও আমাদের বৃদ্ধ বয়সে কোন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে?
পৃথিবীর সকল বাবা মা ভাল থাকুক।
Old Age Home
“Greetings, we have received much good from the developed world. Most of our modern science, lifestyle, or technology are derived from there. With so many good things, and some bad things too, we are slowly taking it or getting used to it. Can you tell us what is the worst we have received from the developed world?
I think that among all the bad things we have adopted from the developed countries, the worst concept is ‘old age home’.
Before going into my explanation, let’s do a little thought experiment. No, no, nothing to fear. You don’t have to do much, just close your eyes for a minute and imagine, twenty, thirty, or forty years from now, that is when you will be old, can no longer work as you do now, are no longer physically capable as you are now, that means you are retired. You have entered in retired life and are thinking, now you will spend the rest of your life safely with your son, daughter, grandson, granddaughter, just then your son or daughter left you in an unknown, unfamiliar, nursing home. There may be skilled people to look after you, a doctor if you are sick, a dietitian to monitor your regular diet, but would you still want to live there? Come, open your eyes now. For those who found the thought experiment difficult, or who still can’t figure it out, here’s a video.
Did you know that Finland has the best nursing homes in the world; there are no facilities that are not available there. But despite everything, there’s one thing even the best nursing homes in the world lack, and that’s family. Old age homes do not have the love that people have for their children, grandchildren, cows, goats, poultry, and even their old furniture. And after spending a whole life, leaving this illusion behind, leaving it in an unknown nursing home is completely inhumane; you must understand it by now! But nursing homes have their upsides. Before going to that, first of all, where did this idea of “old age home” come from?
The first nursing home in the world was established in ancient China. The Shan Dynasty, the oldest in China, took the initiative to build shelters for the homeless and helpless elderly. In the 22nd century BC, the Shan dynasty occupied a special place in history by building these separate shelters for elderly people who were estranged from their families. However, Europeans claim that the oldest old age home was built by King Athelstan in York, Great Britain. And among the oldest old homes still surviving is St. Cross Hospital in Winchester.
In 1840 in Madras, India, “The Friend in Need Society” provided food and sheltar for such indigent old people for the first time. And the first old age home in Bengal was established in 1882 in Kolkata – named “The Little Sisters of the Poor”. The concept of old age home was introduced in Bangladesh by Dr. A. K. Holding M. Abdul Waheed’s hand. In order to provide the necessary support for physical and mental well-being and comfortable living for everyone in old age. A. K. Bangladesh Senior Benevolent Association and Geology Institute were established in 1960 by the initiative of M. Abdul Waheed. In 1985, a government initiative built its own building in Agargaon, Dhaka, and later in 1993-94, a hospital and home building was built with government grants. At present, the Department of Social Welfare is providing accommodation for the elderly in the same place as the children’s families, besides some private institutions work for the welfare of the elderly. All these organizations mainly work to help those who are helpless in old age. There are only eight government nursing homes in all of Bangladesh. These peace homes are located in Chittagong, Rajshahi, Bagerhat, Barisal, Mymensingh, Sunamganj, Tungipara, and Lalmonirhat districts. Also, 10 seats each have been reserved for senior citizens in 85 government child families.
Most children do not keep track of them. No one has children. Some of them do not have children live outside the country. They are forced to stay in nursing homes. Now you may think why I suddenly pulled this history? The common thing behind the creation of old age homes is to serve the helpless, familyless, incapacitated elderly people. The matter will be more clear if we note their names. It means that the concept of modern nursing home and ancient nursing home are not the same. Now let’s see what is the state of nursing homes in the modern world? But before that, don’t forget to subscribe to this channel.
The concept of old age or elderly care is popular all over the world. Elderly care systems vary from country to country. Overall, the elderly care systems in Norway, Sweden, Switzerland, Germany, Canada, Japan, and the USA are the best. This is to say that they are the best – on what basis are they the best? Based on Health Care Index Score, World Happiness Report Score, and Safety Index Score. Don’t go away – without saying difficult words, let’s put it simply, these countries have provided many types of benefits for their elderly people – such as old age allowance or pension, good nursing facilities, and better living environment. But this matter is also different in each country. A few examples will make it clear. Norway is followed by Sweden. It does not cost any money to stay here for senior citizens. Rather, all their expenses are borne by the government. The situation in Switzerland is similar to Sweden. Because of this, these three countries rank highest in elder care.
These three countries are followed by Germany, Canada, and the USA. Japan’s system is very different. Japan is the oldest country in the world. 38 percent of people in this country are 65 or older. The Japanese government has several interesting systems for caring for the elderly. One of these systems is called Furei Kippu. (Fureai Kippu). It is a kind of ticketing system. If you serve an elderly person for an hour, your account will be credited. With this credit, you can make all kinds of purchases just like real money. Because of this type of credit system, Japan’s young generation as well as middle-aged people are interested in serving the elderly. I mean, it’s interesting – instead of spending time with your grandparents, the government is giving you money! Not funny! Don’t forget to subscribe to
our channel if you want to know more interesting stories about Japan. This system seen in Japan is also in the Netherlands. But a little differently. University halls in the Netherlands are student accommodation located around old age homes or old age homes. As a result, students can serve the elderly if they want. And if any student serves the elderly for 30 hours a month, their hostel stay is free. Have you ever wondered how much thought a country has for its elderly citizens to come up with such a wonderful system?
But the story of the USA is not like them. In the countries I mentioned, most of the elderly care facilities are government or community funded, but in the USA, the account is different. Here follows the oil system. That is, if you have a lot of money, you will spend your last years in the USA quite peacefully – but if you don’t, then it is better not to spend your old age there. Great Britain is at number 15 in the parameters I mentioned. However, the British government is trying to find ways to keep the elderly in their families rather than in separate homes. The British government also has an interesting system for looking after their elderly. As I have already said, the British government is more interested in their elderly people living with their families than in old age homes. For this reason, separate allowances are made for the elderly, and parents are encouraged to take their parents along with their grandparents to every school on Parents’ Day. This reduces the tendency of old parents to leave their parents in old age homes even if they think about schooling of children.
Now the question is where is our situation in Asia or South Asia in this parameter? Before that, let’s say that Asia has a huge cultural difference with Europe – America. That is, in Europe and America, children are encouraged to stand on their own feet or be self-reliant when they are eighteen years old. As a result, children often start living separately by the time they turn eighteen. On the other hand, due to financial security, parents also do not want to be a burden on their children in their old age. As a result, in many cases, elderly people choose to live in elderly care facilities for their own benefit. Or because their children have been out of home long ago – they prefer comfortable old age homes to stay like themselves in their later years.
Now let’s talk about Asia. The most comfortable countries for seniors in Asia are Taiwan, South Korea, and Japan. People in these three countries are very sensitive to their elders and do not have to leave their families and go to elderly facilities unless absolutely necessary. As a result, these three countries are very good places to live for older people. In the scale I am talking about, Saudi Arabia is at 33rd position, Russia is 63rd, Pakistan and India are at 76th and 77th respectively. And Bangladesh? 88 out of 90 countries. But there is hope that the Parental Maintenance Bill-2013 was passed in the National Parliament on October 24, 2013. According to the bill, every child should live in the same place with the parents. No child shall force his or her parent or both to live in an old age home or elsewhere or separately against their will. Every child should keep a regular check on the health of their parents. Necessary medical care and care will be provided. Children must visit regularly if they live separately. A fine of one lakh taka, defaulting to a maximum of three months in jail has been kept for the crime related to this. But the question remains – is it possible to force someone to take care of their parents by jail fine?
I started by comparing the old nursing home and the present day. From the examples that I have presented so far, it is clear to you at least that there is no point in comparing us with old age homes in Europe or America – family and culturally we are different – economically we are also vastly different. Therefore, those who want to justify our old age home with the example of Europe and America can give this argument if they want. As I was saying, the idea of old age home is not bad – because its main goal was to keep helpless, poor and childless old people a little bit better till the end of their life. But what does it stand for in this present time? A system that excludes old parents from their own lives, considering them a burden. Yes, many may argue that they are too busy and unable to take care of their parents so they leave them in nursing homes. But there remains the question – no matter how busy we are? No matter how far we are? Do we leave our children in any child home? Don’t come In many cases, we spend our office hours with the children at the daycare center, and after the office, we take them back home with us. So why do we want to leave them at all when it comes to our parents? What will be the answer?
Let’s go back to where I started – we have taken a lot of good things from developed countries, but also got some bad things. Old age homes are like that in the context of Bangladesh. There are government old age homes in Bangladesh for the destitute, economically disadvantaged, and childless elderly – there is certainly a need for them, but the children who are leaving their elderly parents in old age homes to unburden their own lives need to be convinced that – no matter how old they are – there are mothers and fathers – Don’t be burdened. And those who feel that they are not able to take care of their parents properly and old age or nursing home is important to explain to those boys and girls that “Nothing compares to home”. A man has spent his entire life in the world around him, not only the people around him, but even the smallest furniture in the house is intimately familiar with him. Taking her out of her familiar world and leaving her in an unfamiliar nursing home is very inhumane. We should remember, our elderly parents are like our children. What we do not or cannot do to our children – we should not do to our parents. We should remember – one day we will be aged too. Our children learn by watching us. What if they leave us in an old age home like us? May all the parents of the world be well.