শুভেচ্ছা সবাইকে।
কল্পনা করুন তো, আপনার জন্মদিন ২৯ ফেব্রুয়ারি। প্রিয় মানুষদের কাছে থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পাবেন চার বছর পর পর, গিফটও প্রতিবছর মিলবে না, কী প্যাথেটিক তাই না? অবশ্য প্রতি বছর জন্মদিনের পার্টিতে এক গাদা টাকা খরচও করতে হবে না। সেটা একটা ভালো দিকও হতে পারে লিপ ইয়ারে জন্মদিনের।
ভালো মন্দ যাই হোক, গোটা বিশ্বে এখন ৪০ লাখ মানুষ আছে যারা লিপ ইয়ার বেবি, অর্থাৎ তাদের জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি। এই মানুষগুলোকে লিপারস বা লিপিংস বলা হয়।
এবার আসি ঠিক চারবছর পরপর কেন লিপ ইয়ার আসে সে প্রশ্নের বিশ্লেষণে…
চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসে একটা দিন বেশি থাকে ক্যালেন্ডারে, আর সেই বছরগুলো লিপ ইয়ার, এই তথ্য আমরা সবাই জানি। স্কুলেই এসব বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু আমরা কি জানি, কেন লিপ ইয়ার হয়? দুই, তিন বা পাঁচ বছর পর না হয়ে ঠিক চার বছর পরই কেন লিপ ইয়ার ফিরে আসে? লিপ ইয়ারের ইতিহাস কী, কিভাবে শুরু? এসব প্রশ্নের সহজ সমাধান খুঁজতেই আজকের ভিডিও,
৩৬৫ দিনে এক বছর, আমরা সবাই জানি। অর্থাৎ, ৩৬৫ দিনে পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু আসলেই কি তাই? মোটা দাগে একে সঠিক মনে হলেও আসলে সুক্ষ একটা ভুল থেকেই যায় এখানে। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর একবার ঘুরে আসতে আসলে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে বছর ধরলে আমরা প্রতিবছর প্রায় ছয় ঘন্টা হারিয়ে ফেলি, এভাবে প্রতি চল্লিশ বছরে হারিয়ে ফেলতাম দশ দিন, আর এই সময় হারিয়ে ফেলা ঠেকাতেই লিপ ইয়ারের প্রবর্তন।
মূলত, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের সময়ের সঙ্গে ক্যালেন্ডারের হিসাব মেলাতেই এই লিপ ইয়ারের আবির্ভাব। এতে ঋতু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন মহাজাগতিক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জ্যসতা থাকে।
রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ সালে লিপ ইয়ার ধারণার প্রবর্তন করেন। সে সময় প্রতি চার বছর পরপর ৩৬৫ দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ দিন যোগ করে লিপ ইয়ার গণনা শুরু হয়। কিন্তু এখানেও একটা ত্রুটি থেকেই যায়।
যেহেতু সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড, কিন্তু একে ৬ ঘন্টা করে ধরলে প্রতি বছর ১১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড অতিরিক্ত হিসেব হচ্ছে ক্যালেন্ডারে। তাই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি ৪০০ বছরে ৩ দিন অতিরিক্ত গণনা হচ্ছিল।
এই ভারসাম্য মিলিয়ে নিতে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী ১৫৮২ সালে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ওপর আরও একটি সংশোধন আনেন। এখানেও প্রতি চার বছর পর পর লিপ ইয়ার পালন করা হয়। কিন্তু ৪০০ বছরের অতিরিক্ত তিনদিনের হিসাব করতে তিনি একটি সহজ অংক মেলান। চলুন অংকটা দেখি … প্রথমে আমরা দুটি শতাব্দী ধরে নেই। একটি ২০০০ সাল ও অপরটি ২১০০ সাল। প্রথমেই ২০০০ সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করি। অর্থাৎ এটি ৪ দিয়ে ভাগ হচ্ছে। এবার ২০০০ সালকে যদি ৪০০ দিয়ে ভাগ করি তাও করা যাচ্ছে। অর্থাৎ ২০০০ সালকে ৪ বা ৪০০, যা দিয়েই ভাগ করি না কেন, ভাগফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই ২০০০ সালটি হবে লিপ ইয়ার। এবার যদি আমরা ২১০০ সাল ধরে অংকটি আগাই তাহলে কি দাঁড়ায়? ২১০০ সালকে যদি ৪ দিয়ে ভাগ করি তাহলে একটা ভাগফল আমরা পাই। কিন্তু, ২১০০ সালকে যদি ৪০০ দিয়ে ভাগ করি, তাহলে কোন ফলাফল আমরা পাই না। তার মানে, ২১০০ সাল কোনভাবেই লিপইয়ার হতে পারবে না। আর এই পদ্ধতিতেই চারশো বছরের অতিরিক্ত তিনদিন সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। আর এই ক্যালেন্ডারের নাম দেয়া হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
এবার বাংলা ক্যালেন্ডারে আসা যাক, যেহেতু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের লিপ ইয়ারে ফেব্রুয়ারি মাস একদিন বাড়িয়ে ২৯ দিন হিসেব করা হয়, আর ফেব্রুয়ারীর সমসাময়িক বাংলা মাস ফাল্গুনকে লিপ ইয়ারের বছরে একদিন বাড়িয়ে হিসেব করা হয়। এতে করে বাংলা বছরের শুরু অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ প্রতি বছর ইংরেজি ১৪ এপ্রিলের সাথে মিলে যায়। এতে গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাথে বাংলা ক্যালেন্ডারের ভারসাম্য হারায় না।
লিপ ইয়ার নিয়ে বিভিন্ন দেশের মজার মজার প্রথাও চালু আছে। পঞ্চম শতাব্দীতে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ আরও কয়েকটি দেশে একটি প্রথা চর্চা হতো। ধরুন, কোনো মেয়ে একটি ছেলেকে লিপ ইয়ারে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ছেলেটি সেই প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাহলে প্রত্যাখ্যান করার মাশুল হিসেবে মেয়েটিকে এক ডজন হাতমোজা উপহার দিতে হতো। এতো এতো গিফট থাকতে হাতমোজা কেন? শুনুন তাহলে— মেয়েটি প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর যদি ছেলেটি রাজি হতেন, তাহলে মেয়েটির হাতে থাকতো এঙ্গেজমেন্ট রিং। যেহেতু মেয়েটি ব্যর্থ হয়েছেন, তাই তার হাতের আঙুল ফাঁকাই থেকে যেত। মেয়েটির জন্য এই বিষয়টি ছিল লজ্জার। এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতেই হাতের আঙ্গুল ঢাকতে তাকে দেওয়া হতো হাতমোজা। আবার গ্রিসে লিপ ইয়ারে বিয়ের প্রচলন ছিল না। তাঁরা মানতেন এই দিনে বিয়ে করলে, অমঙ্গল হয়।
ভিডিওর শেষ করার আগে লিপ ইয়ার নিয়ে মাথায় আরেকটা খটকা ঢুকিয়ে দেই। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি বছরে পৃথিবীর গতি দশমিক শুন্য শুন্য পাঁচ সেকেন্ড করে কমছে। তাই, ক্যালেন্ডারের সাথে এক সময় পার্থক্যটা আবার বাড়তে থাকবে, ভারসাম্যও হারাবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ক্যালেন্ডারের নিয়মে চললে ৪৯০৯ সাল নাগাদ আমরা পুরো এক দিন পিছিয়ে পড়ব। তখন হিসাব মেলাতে আমাদের সেই বছরে ফেব্রুয়ারি মাস করতে হবে ২৭ দিনের। অর্থাৎ যদি এই পৃথিবীর অস্থিত্ব থাকে তবে ৪৯০৯ সালে আমরা হয়তো উল্টো লিপ ইয়ার পালন করতে পারবো। সময়ের পার্থক্য বাড়ার হারটা যেহেতু খুবই সামান্য, তাই বিষয়টা সমাধান করার জন্য এখনো যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে আছে। আজ এ পর্যন্তই।
সবাইকে লিপ ইয়ারের শুভেচ্ছা। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Leap year
Greetings to all.
Imagine your birthday is 29 February. After four years of receiving birthday wishes from loved ones, the gift will not match every year, how pathetic isn’t it? Of course, you don’t have to spend a fortune on a birthday party every year. It can also be a good aspect of a leap year birthday.
For better or worse, there are now 4 million people around the world who are leap year babies, meaning they were born on February 29. These people are called Leapers or Leapings.
Now let’s come to the analysis of the question why leap year comes exactly after four years…
Every four years there is an extra day in February in the calendar, and those years are leap years, we all know this fact. I read about these things in school. But what do we know, why are leap years? Why does leap year return exactly four years instead of two, three or five? What is the history of leap year, how did it start? Today’s video is to find simple solutions to these questions.
365 days is a year, we all know. That is, the earth orbits the sun once in 365 days. But is it really so? Although it seems correct in broad strokes, there is actually a subtle mistake here. It actually takes 365 days, 5 hours, 48 minutes and 47 seconds for the Earth to go around the Sun once. That is, if the year is 365 days, we lose about six hours every year, thus losing ten days every forty years, and to prevent this loss of time, leap year was introduced.
Basically, the advent of this leap year is to match the calendar calculation with the time of the earth’s rotation around the sun. It contains harmony between various cosmic events including seasonal changes.
Roman ruler Julius Caesar introduced the concept of leap year in 45 BC. At that time leap year calculation starts by adding 1 extra day to 365 days every four years. But here too there is an error.
Since it takes 365 days, 5 hours, 48 minutes and 47 seconds for the earth to go around the sun once, but if it is 6 hours, 11 minutes and 13 seconds are added to the calendar every year. So the Julian calendar was adding 3 days every 400 years.
In 1582, Pope Gregory XIII made another correction to the Julian calendar to balance this balance. Here too, leap years are observed every four years. But to account for the extra three days of 400 years, he added a simple number. Let’s look at the numbers… First we haven’t been there for two centuries. One is 2000 and the other is 2100. First divide the year 2000 by 4. That is, it is divisible by 4. Now, if we divide the year 2000 by 400, it can also be done. That is, the year 2000 is divided by 4 or 400, no matter by which, the quotient is obtained. So the year 2000 will be a leap year. Now if we advance the figure for 2100 years, what does it stand for? If we divide the year 2100 by 4 then we get a quotient. But, if we divide the year 2100 by 400, then we do not get any result. That means, the year 2100 cannot be a leap year at all. And in this way the additional three days of four hundred years are being adjusted. And this calendar is called Gregorian calendar.
Let us now come to the Bengali calendar, since the month of February is counted by one day in a leap year of the Gregorian calendar, and the contemporary Bengali month of February, Falgun, is counted by one day in a leap year. This makes the beginning of the Bengali year i.e. Pahela Baisakh coincide with English April 14 every year. It does not balance Bengali calendar with Gregorian or English calendar.
Different countries have funny customs about Leap Year. In the fifth century, a custom was practiced in England, Ireland, Denmark and some other countries. Suppose a girl proposes to a boy in a leap year and the boy rejects the proposal. Then the girl had to be given a dozen gloves as a price for her refusal. Why gloves to have so many gifts? Listen then – if the boy agreed after the girl proposed, then the girl would have the engagement ring. Since the girl had failed, her finger would have remained empty. This was a shame for the girl. Gloves were given to him to cover his fingers to save him from this shame. Again, leap year marriages were not practiced in Greece. They believed that marrying on this day would bring bad luck.
Before the end of the video, I put another puzzle on the head with the leap year. According to scientists, Earth’s speed is slowing down to five seconds per year. So, the time difference with the calendar will increase again, losing balance. According to scientists, if we follow the rules of this calendar, we will fall back by one full day by 4909. Then we have to make the month of February 27 days in that year to match the calculation. That is, if this world exists, then in the year 4909 we may observe a reverse leap year. Since the rate of increase in time difference is very small, we still have enough time to solve the problem. So far today.
Happy Leap Year to everyone. Stay healthy everyone, stay well.