কেন দেশ ছাড়ছে তরুণরা? Brain Drain | মেধাশূন্য হচ্ছে দেশ | Ahmed Pipul

মেধা পাচার: নেপথ্যের কারণ

শুভেচ্ছা।

চলুন শুরুতেই একটা সত্যি ঘটনা জেনে আসি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মিনহাজ ছোট বেলা থেকে তুখোড় মেধাবী। স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম। এসএসসি আর এইচএসসিতে পেয়েছে গোল্ডেন এ প্লাস। বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করে চান্স পায় সরকারি মেডিকেলে। যথারীতি ভালো রেজাল্ট নিয়ে এমবিবিএস পাশ করে ঢুকলো বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে। চাকুরীর একবছরের মাথায় এলো যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল স্কলারশিপে উচ্চতর ডিগ্রি নেবার সুযোগ। লুফে নিলো সে। বাবার সহযোগিতা আর মায়ের অশ্রুসিক্ত কান্নার স্মৃতি নিয়ে পাড়ি জমালো স্বপ্নের দেশ অ্যামেরিকায়। তবে ডিগ্রী নিয়ে দেশে না ফিরে থিতু হলো সে দেশেই। মিনহাজের মতো এভাবেই আমাদের দেশ থেকে প্রতিনিয়ত নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন করে বিদেশে থিতু হয়ে নিজেদের মেধা বিলিয়ে দিচ্ছে শত শত মেধাবী। কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি, কেন এভাবে মেধার পাচার হচ্ছে? সমস্যাটা কোথায়? আর এর সমাধানই বা কী।

‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভিটি দেখেছেন নিশ্চয়ই। জনপ্রিয় এই বলিউড মুভির থিমটাই ছিলো সন্তানদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নির্ধারণের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে। মুভিটিতে পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের কথাটা বারবার এসেছে। সিনেমাটির মতো আমাদের দেশে অনেক পরিবার এখনো পুত্র সন্তান হলে ইঞ্জিনিয়ার আর কন্যা সন্তান হলে হবে ডাক্তার, এই প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না।

এই দুই প্রফেশনের বাইরে গিয়ে ইদানিং নতুন একটি ট্রেন্ড ধরতে ব্যস্ত আরেকটি বড় পক্ষ। তারা আবার সন্তানদের দেশেই পড়াতে চান না। পারলে জন্মের পরেই পাঠিয়ে দেন ইউরোপ-আমেরিকার কোন দেশে। অনেকে তো আবার নাগরিকত্ব পেতে সন্তানই জন্ম দেন বিদেশে গিয়ে। আরেক দল আছে, যারা দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় আর মেডিকেল থেকে পাশ করে উচ্চ শিক্ষার নাম করে বিদেশে যান। যাদের বেশিরভাগই আর দেশে ফেরেন না। এভাবে দেশের তরুণ আর মেধাবীরা যদি দেশ ছাড়েন তাহলে ক্ষতিটা কোথায়?    

বিশ্বজুড়ে দেশ ছাড়ার ট্রেন্ডটা শুরু হয় ১৯৪০ সাল থেকে। তখন অবশ্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতো ইউরোপের অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশের নাগরিকেরা। ২০০০ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের অনুন্নত আর উন্নয়নশীল দেশের প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমায়। আর এর মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে পরিবারের অন্যদের ভরনপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে।

১৯৭০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৪০টি দেশ নিয়ে একটি ডিটেইল রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের উন্নত কয়েকটি দেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা বেশি। ওই রিপোর্ট অনুসারে বিদেশগামী চিকিৎসকদের ৯০ ভাগেরই পছন্দের দেশ ছিলো অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- আইওএম- এর ২০২২ রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালেই বিশ্বব্যাপী অভিবাসীর সংখ্যা ২৮ কোটি ছাড়িয়েছে। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন শতাংশ। আবার আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের দুই-তৃতীয়াংশ বসবাস করছে মাত্র ২০টি দেশে। এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাঁচ কোটির বেশি ভিনদেশি মানুষ পাড়ি জমিয়েছে সেখানে। এ তালিকায় খুব বেশি পিছিয়ে নেই জার্মানি, সৌদি আরব, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য ।

তবে এটা ঠিক, প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ মেধাগুণে সৎভাবে উন্নত জীবন যাপনের অধিকার রাখে। মানুষ যেখানে জান-মালের নিরাপত্তা পাবে, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা পাবে, নিজের মেধার স্বীকৃতি পাবে সেখানেই ছুটে যাবে, বিশ্বায়নের যুগে সেটাই স্বাভাবিক। তবে দেশকে উজাড় করে দিয়ে, যেভাবেই হোক বিদেশে পাড়ি দেবার প্রবণতা বাংলাদেশের মতো আর কোথাও কি আছে?   

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যখন টানলাম, তখন দেশের কিছু ডেটা দেই। আইওএম-এর প্রতিবেদন অনুসারে যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, সে তালিকায় বাংলাদেশ ছয় নম্বরে। বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় বলছে, এই সংখ্যা দেড় কোটির কম নয়। এদের সিংহভাগই উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য গিয়ে আর ফেরত আসেনি।   

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার হিড়িক কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য গেছে। বিগত কয়েক বছরে এসে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার গুণ। ইউনেস্কো বলছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন।

অবশ্য বেশিরভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট থাকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া। ২০২১ সালের ওপেন ডোর রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল একচেঞ্জের রিপোর্ট  বলা হচ্ছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশিকে স্টুডেন্ট ‍ভিসা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ২০০৯ সালের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি। আর ২০২২ সালে এই সংখ্যা ২৮ ভাগ বেড়ে বেড়ে প্রায় ১১ হাজার। এই পরিসংখ্যানেই প্রমাণ করে, আমরা মেধাবীদের ধরে রাখতে পারছিনা।    

সাধারণত যুদ্ধ, সুযোগ সুবিধার অভাব, উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা না থাকা, অপ্রতুল বেতন ভাতা, প্রযুক্তিগত সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা জীবন যাপনের ঝুঁকি এড়াতে মানুষ নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমায়। বলতে গেলে সব দেশেই কম বেশি এই সংকট আছে। তবে উন্নয়নশীল বা স্বল্পউন্নত দেশগুলোতে সংকটটি তীব্র।

এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও কিন্তু কম চালাক না। বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রণোদনা দিয়ে সবচেয়ে মেধাবী আর কর্মক্ষম তরুণদেরকেই তারা টার্গেট করছে। ভালো চাকরি, উন্নত জীবন পেয়ে বেশিরভাগই আর দেশে ফিরতে চায় না। তখন তাদের কাছে দেশ হয়ে যায় বিদেশ। হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রমী মেধাবী আছে যারা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ফিরে দেশের জন্য কাজ করছে।  

অবশ্য এর দায় শুধু মেধাবীদের উপর চাপালে ভুল হবে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, যোগ্যাতার মূল্যায়ন না থাকা, নিরাপত্তার অভাব সব কিছুর মিশেলে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। সত্যটা হলো, একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে মেধাবী মধ্যবিত্তরাই নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু এখন সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হল- মধ্যবিত্তের মানসিকতায় পাল্টে গেছে। সবাই কেমন যেন বিদেশে থিতু হবার দৌড়ে ব্যস্ত। তাদের স্বপ্ন, লেখাপড়া, কর্মকাণ্ড সবই বিদেশমুখী। একবার সেখানে পাড়ি দিতে পারলেইও হল, গাড়ি বাড়ি, টাকা কড়ির দেখা মিলবে অনায়াসে

সাথে মিলবে মিহিবোনার সুতোর মতন স্বপ্নের জীবন। তবে আসলেই কি তাই-

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে সিনেমার গল্প অবশ্য কিছুটা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত এই সিনেমার গল্পটি ছিলো কোলকাতার বাঙালি মেয়ে সাগরিকাকে ঘিরে। সাবলীল ইংরেজি তো দূরের কথা, হিন্দিটাও ভালোভাবে বলতে পারে না সে। বিয়ের পর স্বামীর কর্মসূত্রে পাড়ি জমায় নরওয়েতে। সেখানেই দুই সন্তানের জন্ম। আর পাঁচজন বাঙালি মায়ের মতোই এক ছেলে এবং এক মেয়েকে বড় করে তুলছিলেন । কিন্তু আচমকাই বিনা মেঘে বজ্রপাত। ছেলেমেয়েকে হাত দিয়ে খাওয়ানো, একই বিছানায় ঘুমাতে দেয়া এবং শাসন করার অপরাধে দুই শিশু বাচ্চাকেই কেড়ে নিয়ে যায় নরওয়ে প্রশাসন। শুধু সংস্কৃতিগত ভিন্নতার কারণে সন্তানদের ফিরে পেতে প্রাণপণে লড়তে হয় সাগরিকাকে।  

সুন্দর-নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে স্থায়ী হতে গিয়ে সাগরিকার মতো বিড়ম্বনায় পড়ে দেশে ফিরে আসার গল্প হয়তো আমাদের দেশেও খুঁজে পাওয়া যাবে অনে। এমন গল্প জানা থাকলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

Talent trafficking: the reasons behind it

Greetings to all.

Let’s start with a true story. The son of a middle-class family, Minhaj, was brilliant from an early age, consistently ranking first in every school exam. He achieved a Golden A Plus in SSC and HSC. His parents secured a spot in the government medical field through his achievements. After passing MBBS with good results, he entered the BCS health cadre. A year into his service, an opportunity arose to pursue a higher degree on a full scholarship from a renowned university in the United States. He took the opportunity. With his father’s support and his mother’s tearful goodbyes, he moved to the dream country of America. However, after obtaining his degree, he did not return to his home country and settled in the United States. Like Minhaj, hundreds of talented individuals continually sever ties with our country, taking their skills abroad and contributing to other nations. Have we ever considered why this talent migration occurs? Where is the problem, and what is the solution?

You may have seen the movie ‘Three Idiots.’ The theme of this popular Bollywood movie revolved around the choices and preferences of children in determining their future careers. The movie emphasizes the traditional mindset of many families in our country, where having a son become an engineer and a daughter become a doctor is still prevalent.

Beyond these two professions, another significant trend has emerged recently. Some parents do not want to educate their children in the country; if possible, they prefer sending them to Europe or America after birth. Some even go to the extent of giving birth abroad to obtain citizenship. There is another group that goes abroad for higher education after graduating from the country’s top universities and medical schools, with many never returning home. If the country’s young and talented individuals continue leaving, where does the loss lie?

The global trend of people leaving their home countries started around 1940, with citizens of relatively less developed European countries migrating to the United Kingdom and the United States. A 2000 study revealed that approximately 175 million people from underdeveloped and developing countries worldwide leave their countries and migrate to developed ones. Out of this, 65 million people take the responsibility of providing for their families by securing employment.

In 1970, the World Health Organization published a detailed report on 40 countries, indicating that individuals working in the health sector are more likely to settle in developed countries. According to the report, Australia, Canada, Germany, the United Kingdom, and the United States were the preferred destinations for 90 percent of doctors going abroad.

According to the 2022 report of the International Organization for Migration (IOM), the number of migrants worldwide exceeded 28 million in 2020, which is three and a half percent of the total world population. Two-thirds of international migrants live in just 20 countries, with the United States leading the list. More than five million foreigners have migrated there, and Germany, Saudi Arabia, Russia, Canada, Australia, and the United Kingdom follow closely.

While it is true that everyone has the right to lead an honest life based on their merits, people often migrate to places where they can find security, a better life, and recognition of their talents. This is normal in the era of globalization. However, is the tendency to move abroad prevalent in countries like Bangladesh after facing various crises?

When examining Bangladesh’s situation, it’s essential to consider some data. According to the IOM report, Bangladesh ranks sixth among countries from which the largest numbers of people have migrated abroad. Presently, about 7.5 million Bangladeshis live abroad permanently, though the Expatriate Welfare Ministry suggests this number is closer to 15 million. The majority went abroad for higher degrees and never returned.

How much is the interest among Bangladeshi students regarding studying abroad? The answer is, more than 24 thousand students from Bangladesh went overseas for higher education in 2015, and this number has quadrupled in recent years. According to UNESCO, 49,151 Bangladeshi students pursued higher education in 57 countries worldwide during the academic year 2020-2021. However, the primary destinations for most Bangladeshi students are the USA, Canada, and Australia. The 2021 Open Door Report on International Educational Exchange reveals that the United States issued student visas to 8,598 Bangladeshis in the 2020-21 academic year, which is three times more than in 2009. In 2022, this number increased by 28 percent to about 11 thousand. These statistics underscore the challenge of retaining talent in our country.

People generally migrate from their country to another to escape war, lack of facilities, poor living conditions, insufficient wages, technological crises, political unrest, or life-threatening risks. It’s common for many countries to face these crises to some extent. However, the situation becomes more acute in developing or less developed countries.

Developed countries are not less strategic; they target the most talented and active youth by offering incentives to fulfill various basic needs. Unfortunately, many of these talented individuals do not return home after securing good jobs and a better life. In essence, the country becomes foreign to them. There are only a handful of exceptionally talented individuals who return with higher education and contribute to their home country.

Of course, it would be incorrect to place the entire responsibility on these geniuses. Corruption, nepotism, a lack of merit evaluation, and a lack of security have contributed to this situation. The truth is that it’s the talented middle class that propels a nation forward. However, the most alarming aspect is the shift in the mentality of the middle class. Everyone seems engrossed in the race to settle abroad, with their dreams, education, and activities all centered around foreign lands. Once there, they expect to find cars, money, and a comfortable life, akin to the narrative of an idyllic future. But is it really so?

The recently released movie “Mrs. Chatterjee vs. Norway” conveys a slightly different message. Based on a true story, it revolves around Sagarika, a Bengali girl from Kolkata. She is not fluent in English and struggles with Hindi. After marriage, her husband moves to Norway, where two children are born. However, cultural differences lead to the Norwegian authorities taking the children away for practices like hand-feeding, co-sleeping, and discipline. Sagarika fights hard to reclaim her children, highlighting the challenges of settling abroad for a promising future. Similar stories of returning home, like a sailor returning after settling abroad, might exist in our country as well. If you know such stories, please share them in the comment box.

Thanks, everyone.

Stay well, stay healthy.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top