Fuchka Shop in New York-নিউইয়র্কেফুচকারদোকান

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে এসে যদি মনে না হয় আপনি আমেরিকায় আছেন, তবে দোষের কিছু নেই। এটা যেন বাংলাদেশেরই একটা ছোট্ট অংশ। এখানে শুধু বাঙালিরা নয়, ভিনদেশিরাও এসে মজে যান আমাদের ঐতিহ্যবাহী সব খাবারে।

শুভেচ্ছা সবাইকে।

আমাদের দেশের স্ট্রিটফুডের কথা বললে সবারই মাথায় আসে যে ফুডটির কথা সেটি হলো ফুচকা।  আর সেকারণেই হয়ত দেশের সীমানা পেরিয়ে আমেরিকার প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসকেও মুগ্ধ করছে এই খাবারটি।

জ্যাকসন হাইটসের যে জায়গাটায় আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখলে হয়ত মনে করতে পারেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিখ্যাত স্ট্রিটফুড হাব- বেইলি রোড এটি। একসাথে এতগুলো ফুচকার দোকান আর কোথাও চোখে পড়েনি।

ফুচকার যে স্বাদ, এট একেবারে বাংলাদেশি টক ঝাল মিষ্টি ফুচকার যে ফিউশন, একই স্বাদ। চেনার উপায় নেই, বোঝার উপায় নেই যে এটি বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মেইল দূরে নিউইয়র্কের ফুচকা।

সংস্কৃতি বদলে ফুচকা যেমন বিভিন্ন জায়গা দখল করেছে, তেমনি ফুচকার স্বাদেও এসেছে পরিবর্তন। ছোলা, ডাল, আলু আর টকের বেসিক ফুচকায় আটকে নেই জনপ্রিয় এই খাবারটি। দেখুন কী ভীষণ সুন্দরভাবে সাজানো! ফুচকার মধ্যে ঢালা হচ্ছে সেদ্ধ আলু, ছোলা, আর ঝাল-মসলা। আর উপরে থাকছে টক-ঝাল পানি! আর এখানে শুধু সাধারণ ফুচকা নয়, দই ফুচকা, চিজ ফুচকা, এমনকি মাটন স্টাফড ফুচকা ছাড়াও অনেক রকম ফুচকা পাওয়া যায়। ফুচকার এসব ফিউশন আজকাল ভীষণ জনপ্রিয়। তবে যতই স্বাদ পাল্টাক, বাংলাদেশের পরিচিত সাধারণ ফুচকার স্বাদ কখনো পুরোনো হবে না। আর সেজন্যই তো এশিয়ার সেরা ৫০ স্ট্রিটফুডের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে দেশের এই ফুচকা। ২০২২ সালে কোয়েস্ট’স ওয়ার্ল্ড অব ওয়ান্ডার (Quest’s World of Wonder) সিরিজের অংশ হিসেবে এ তালিকা প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ফুচকার জনপ্রিয়তা উপমহাদেশ পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাতেও পৌঁছে গেছে। প্রবাসীদের মাধ্যমে ফুচকার স্বাদে বিমোহিত হচ্ছে পশ্চিমারাও।

জ্যাকসন হাইটসে পা রাখলেই আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য বাংলাদেশি খাবারের দোকান। এগুলোর বিশেষত্বই হলো ফুচকা। স্বাদ এবং ঐতিহ‍্যে বাংলাদেশিদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় খাবারটি।

জ‍্যাকসন হাইটসের Dhaka Delights — তাদের ফুচকা হালকা মসলাদার। আর Tong নামে একটি দোকান তো ঢাকার রাস্তার টং চায়ের দোকানগুলোর কথা মনে করিয়ে নস্টালজিক করে দেয় প্রবাসীদের। জ্যাকসন হাইটসে বসে তাই প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেইলি রোডের স্মৃতিচারণ করতেই পারেন। তবে বেইলি রোডের ফুচকার স্বাদ আলাদা। পাতলা ক্রিসপি ফুচকা, ঝাল পানি আর আলু-মসলার ইউনিক কম্বিনেশন। আবার জ্যাকসন হাইটসের ফুচকার স্বাদ আরেকভাবে অনন‍্য। এখানে মসলার একটা হালকা ভিন্নতা আছে। তবে সবচেয়ে বড় মিল হলো, দুই জায়গাতেই ফুচকা খাওয়া মানে শুধুই খাওয়া নয়; এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে  ফুচকা খাওয়া একটি সামাজিক উৎসবের মতো।

ফুচকা শুধুই একটি স্ন্যাকস নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পথে-ঘাটে যে আনন্দ এবং উৎসব, এই ফুচকা বহন করে এনেছে সুদূর আমেরিকাতেও।

জ্যাকসন হাইটসের ফুচকার জনপ্রিয়তার পেছনে কাজ করে চলেছেন এখানকার প্রবাসী দোকানিরা। বাঙালি কমিউনিটির পাশাপাশি বিদেশিদের কাছেও বেশ প্রিয় হয়ে উঠছে ফুচকা।

বাংলাদেশে অবশ্য ফুচকা এখন আর বেইলি রোডে আটকে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, ধানমন্ডি লেক কিংবা রবীন্দ্র সরোবর থেকে শুরু করে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে পূর্বাচল তিনশো ফিট– সব জায়গাতেই জমজমাট। এমনকি বিভিন্ন এলাকার অলিতে-গলিতে পর্যন্ত কত যে ফুচকার দোকান ছড়িয়ে আছে, তার কোনো হিসাব নাই।

আসলে খাবারটাই একটা বিস্ময়। তবে জিনিস এক হলেও দেশভেদে এর নামের ভিন্নতা আছে। এই যেমন বাংলা ও আসামে ফুচকা বললেও, উত্তর ভারতে গোলগাপ্পা, মহারাষ্ট্রে পানিপুরি, উড়িষ্যায় গুপচুপ, রাজস্থানে ‘পানি কে বাতাশে’ আবার অনেক জায়গায় ভেলপুরি বা ফুলকি নামেও পরিচিত! নাম যাই হোক না কেন, এই খাবার ভারতীয় উপমহাদেশের সব মানুষেরই প্রিয়।

ফুচকার উৎপত্তি নিয়েও নানারকম মজার গল্প প্রচলিত। জানেন কি, ফুচকা কিন্তু আধুনিক সময়ের কোনো খাবার নয়। ফুচকার ইতিহাস হাজার বছর পেরিয়ে প্রাচীন ভারতের মগধ সাম্রাজ্য এবং মহাভারত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এটি শুরু হয়েছিল মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী পাটলিপুত্রে। প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি পুরোনো মগধ সাম্রাজ্যে চালগুঁড়ো দিয়ে তৈরি গোল ফুচকা ছিল স্থানীয় খাবারের অংশ। তবে, প্রথম ফুচকা কে বানিয়েছিলেন, সেই কারিগরের নাম ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০ সালে লেখা প্রাচীন ‘ইন্ডিকা’ বইতেও ফুচকার নাম পাওয়া যায়। আর গ্রিসের পর্যটক মেগাস্থিনিসের লেখা বইটি কিন্তু মহাভারতের সমসাময়িক। মজার ব্যাপার হলো মহাভারতের কাহিনীতেও ফুচকার আবির্ভাবের বিষয়টা আছে। সেসময় পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী ছিলেন রান্নাবান্নায় ব্যাপক পারদর্শী। আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, এখনো কেউ ভালো রান্না জানলে তাকে ‘রন্ধনে দ্রৌপদী’ বলে প্রশংসা করা হয়। ধারণা করা হয়, প্রথম ফুচকা দ্রৌপদীই তৈরি করেছিলেন।

জতুগৃহ দহনের পর বনবাসে থাকা পাণ্ডবরা যখন মা কুন্তীর সাথে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন দ্রুপদ রাজকন্যা দ্রৌপদীর সঙ্গে তাদের পরিচয় এবং পরে বিয়ে হয়। নতুন বউ হিসেবে শ্বশুরবাড়ি আসার পর কুন্তী তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য নতুন কিছু রান্না করার কথা বলেন। কিন্তু উপকরণ হিসেবে কিছুই আনা হয়নি বাজার থেকে। দ্রৌপদী রান্নাঘরে শুধু সামান্য ময়দা আর সবজি পেলেন। এত সামান্য জিনিসপত্র দিয়ে কী এমন রান্না করবেন, যা একই সাথে নতুন ধরনের কোনো খাবার হবে, আবার মুখরোচকও হবে? – ভাবতে লাগলেন দ্রৌপদী।

দ্রৌপদী তখন ময়দার ছোট্ট পুরি বানিয়ে তাতে সবজি আর মসলা ভরে তৈরি করেন এক নতুন খাবার। একদম নতুন এই খাবার দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামীরই দারুণ পছন্দ হয়ে যায়। ছেলেদের হাসিমুখ দেখে খুশি হয়ে কুন্তী বলেন, ‘এই খাবার অমরত্ব লাভ করবে’। বলা হয়ে থাকে, সেই খাবারটিই ছিল সবার পছন্দের ফুচকা।

যদি সেই খাবার ফুচকা হয়ে থাকে, তাহলে কুন্তীর ভবিষ্যদ্বাণী শতভাগ মিলে গেছে। হাজার হাজার বছর পার হলেও এই খাবারের জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি, বরং দিন দিন বাড়ছে। ফুচকা শুধু একটি খাবার নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যেমন, একটা সময় ঈদের দিনে সেমাই ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিয়ের খাবারে জর্দা। দুটো জায়গাতেই ফুচকা বেশ ভালোভাবেই ভাগ বসিয়েছে। ঈদের দিনে প্রায় প্রতিটি বাসায়ই ফুচকার আয়োজন রাখা হয়। আবার বিয়ের খাবারের আয়োজনে আলাদা করে ফুচকা কর্নার রাখা হয় ইদানিং।

খাবার শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বাহক। জ্যাকসন হাইটসের ফুচকা প্রমাণ করে, প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের শিকড়ের টান ভুলতে পারি না। তাই যারা নিউইয়র্কে আছেন বা কখনো আসবেন, তারা জ্যাকসন হাইটসের এই স্বাদ এবং এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।

আপনাদের সবচেয়ে প্রিয় ফুচকার দোকানটা কোনটি? মনে আছে? মনে থাকলে কমেন্টে জানান। প্রথম একশো জনের মধ্যে তিনজনের বাসায় আমরা ফুচকা পাঠিয়ে দেব, সে আপনি যে মহাদেশেই থাকুন না কেন।

ধন্যবাদ সবাইকে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Fuchka Shop in New York

When you visit Jackson Heights in New York and feel like you’re not in America, it’s no big deal. It’s as if this place is a little slice of Bangladesh. Not just Bangladeshis, but even people from other countries get captivated by our traditional dishes here.

Greetings to everyone.

When we talk about street food from our country, the first thing that comes to mind is undoubtedly fuchka. And perhaps that’s why this delicacy has crossed borders and mesmerized the heart of New York City’s Jackson Heights in America.

Standing in this spot in Jackson Heights, you might think you’re in the famous street food hub of Dhaka – Bailey Road. Nowhere else have I seen so many fuchka shops in one place.

The taste of fuchka here is just like the fusion of sour, spicy, and sweet Bangladeshi fuchka. There’s no way to tell the difference, no way to know that this fuchka is thousands of miles away from Bangladesh, right here in New York.

Just as fuchka has occupied spaces across cultures, its flavors have also evolved. The popular fuchka has transcended its basic chickpeas, lentils, potatoes, and tangy water. Look how beautifully it’s served! The fuchka here is filled with mashed potatoes, chickpeas, and spicy seasonings, topped with tangy-spicy water! And not just the traditional ones – you’ll find yogurt fuchka, cheese fuchka, even mutton-stuffed fuchka and many other varieties. These fuchka fusions have become extremely popular these days. However, no matter how the flavors change, the familiar taste of classic Bangladeshi fuchka will never get old. That’s why this dish made it to Asia’s Top 50 Street Foods. In 2022, this list was published by the American media outlet CNN as part of the “Quest’s World of Wonder” series.

The popularity of fuchka has crossed the subcontinent, making its way into Europe and America. Westerners, too, are falling for its taste through the efforts of expatriates.

As soon as you step into Jackson Heights, you’ll find countless Bangladeshi food stalls. Among them, fuchka is the specialty. It is a dish uniquely dear to Bangladeshis for both its taste and heritage.

Dhaka Delights in Jackson Heights serves fuchka with a mildly spiced flavor. And a place called Tong – it’ll make you nostalgic, reminding you of Dhaka’s street-side tea stalls. Sitting here, expatriate Bangladeshis can easily reminisce about the fuchka on Bailey Road. Yet, the taste of Bailey Road’s fuchka is distinct. Thin, crispy fuchka, spicy water, and a unique combination of potato and spices. On the other hand, the taste of Jackson Heights’ fuchka is uniquely special in its own way. There’s a slight variation in spices here. But the biggest similarity is that in both places, eating fuchka is not just about the food; it’s an extraordinary experience. Sitting with family, friends, or loved ones and enjoying fuchka feels like a social festival.

Fuchka is not just a snack; it has become a part of our culture. The joy and festivity of the streets of Bangladesh have traveled far to America through this fuchka.

The popularity of fuchka in Jackson Heights is fueled by the hardworking expatriate vendors here. It’s not just popular among the Bangladeshi community but also loved by foreigners.

In Bangladesh, fuchka is no longer limited to Bailey Road. From TSC Square at Dhaka University, Dhanmondi Lake, Rabindra Sarobar to Uttara’s Diabari and Purbachal 300 Feet Road – fuchka is everywhere. Even in small alleys of various neighborhoods, countless fuchka stalls have sprung up, too many to count.

This food is truly a wonder. Yet, despite being the same, its name varies across regions. For example, while it’s called fuchka in Bengal and Assam, it’s golgappa in North India, panipuri in Maharashtra, gupchup in Odisha, pani ke batashe in Rajasthan, and in some places, even known as bhelpuri or phulki! No matter what it’s called, this dish is a favorite across the Indian subcontinent.

There are also many amusing stories about the origin of fuchka. Did you know that fuchka is not a modern invention? Its history spans thousands of years, going back to ancient India’s Magadha Empire and even the Mahabharata.

According to many historians, it originated in the capital of the Magadha Empire, Pataliputra. The round fuchka made from rice flour was part of the local cuisine over 2,500 years ago. However, the name of the artisan who created the first fuchka has been lost in history.

Even in the ancient text “Indica,” written in 310 BCE, there’s a mention of fuchka. This book by Greek traveler Megasthenes is contemporaneous with the Mahabharata. Interestingly, the story of fuchka also appears in the Mahabharata. At that time, Draupadi, the wife of the Pandavas, was highly skilled in cooking. Even today, if someone is an exceptional cook, they’re often praised as being “Draupadi in cooking.” It’s believed that Draupadi made the first fuchka.

After the burning of the House of Lac, when the Pandavas were wandering in exile with their mother Kunti, they met Princess Draupadi of King Drupada and later married her. After arriving at her in-laws’ house as a new bride, Kunti tested Draupadi’s culinary skills. She asked her to prepare a new dish, but no ingredients were brought from the market. Draupadi found only a little flour and some vegetables in the kitchen. She pondered over what she could make with such meager ingredients that would be unique and delicious.

Draupadi then made small puri from the flour and stuffed them with vegetables and spices, creating a brand-new dish. This unique creation became a favorite among her five husbands. Seeing their happy faces, Kunti declared, “This food will achieve immortality.” It’s said that this food was what we now call fuchka.

If that food was indeed fuchka, Kunti’s prediction turned out to be 100% accurate. Even after thousands of years, the popularity of this dish hasn’t diminished one bit; instead, it continues to grow. Fuchka is not just food; it has become a part of our culture and tradition. For instance, once upon a time, semai was an integral part of Eid, and zarda was a must at weddings. Now, fuchka has made its place in these events as well. Almost every household prepares fuchka on Eid, and wedding menus often include a separate fuchka corner nowadays.

Food is not just about taste; it carries our heritage and culture. The fuchka of Jackson Heights proves that even in a foreign land, we cannot forget the pull of our roots. So, for those who live in New York or ever visit, don’t miss the chance to savor this taste and experience in Jackson Heights.

Which fuchka shop is your favorite? Do you remember? If you do, share in the comments. Among the first 100 people, three lucky ones will receive fuchka delivered to their doorstep, no matter which continent you live on.

Thank you, everyone. Stay healthy and well.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top