শুভেচ্ছা সবাইকে।
সালটা ২০২০। কোভিড মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু ঠিক এই বছরই ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বনে যান ইলন মাস্ক। বছরের শুরুতে তার সম্পদ ২৭ বিলিয়ন থাকলেও বছর শেষে তা দাঁড়ায় ১৭৭ বিলিয়নে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ইলন মাস্ক উঠে আসেন এক নম্বরে।
ইলন মাস্কের জীবনটাই নাটকীয়তায় ভরা। তার কাজে-কর্মে বোঝা যায় তিনি নিজেও নাটকীয়তা পছন্দ করেন। তার পাহাড়সম সম্পদের রহস্য জানার আগে চলুন একটা গল্প শুনে আসি।
২০১৯ সাল। টেসলা ঘোষণা করলো তাদের নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়ি ‘সাইবারট্রাক’। আগে থেকেই বলা হয়েছিল, এই গাড়ি এতটাই শক্তিশালী যে, মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের সুপার হিরো থরের হ্যামারের আঘাতেও কিছুই হবে না গাড়িটির। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে তুমুল আলোচনাও। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল টেসলা ও ইলেকট্রিক গাড়ির ভক্তদের মাঝে।
সাইবারট্রাক উদ্বোধনের দিন এই আলোচনা আরও প্রবল হয়। এদিন মঞ্চে ঘটেছিলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এই গাড়ি কতটা শক্তিশালী আর মজবুত, তা প্রমাণ করতে ছোট্ট একটি লোহার বল ছুঁড়ে মারা হয়। আর এতেই ভেঙে যায় সাইবারট্রাকের গ্লাস। দর্শকদের সামনে রীতিমতো নাক কাটা যায় ইলন মাস্কের। যা হওয়ার তাই হলো। বিশাল ধাক্কা খেল ইলন মাস্কের স্বপ্নের সাইবারট্রাক প্রজেক্ট।
যদিও মঞ্চেই ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছিলেন, সাইবারট্রাকের বুলেটপ্রুফ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে। এমনকি যা যা বলা হয়েছিল তার সব ফিচারই এতে যুক্ত করা হবে।
এই ঘোষণা নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে চলে বহু হাসি-তামাশা। ‘ইলন মাস্ক সাইবারট্রাক’, ‘টেসলা সাইবারট্রাক’ হয়ে ওঠে ভাইরাল কিওয়ার্ড, যা পরবর্তী কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। তবে কি ইলন মাস্কের ইমেজ শেষ? তার সাহসী ঘোষণাগুলো কি তাহলে আসলেই ফাঁকা বুলি শুধু?
ধারণা করা হয়, পুরো ব্যাপারটাই ইলন মাস্কের একটা পরিকল্পিত মার্কেটিং স্টান্ট। এটা ছিল তাদের স্মার্ট মার্কেটিং কৌশলের অংশ! এই প্র্যাঙ্কের পর সাইবারট্রাক প্রি-অর্ডার করলো ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। এতেই বোঝা যায়, যেকোনো ভুলও ব্র্যান্ডের জন্য বয়ে আনতে পারে বড় সুযোগ! আর এই পলিসি যে কাজ করেছে, তা তো এখন স্পষ্টই। ইলন মাস্কের এই প্র্যাঙ্কের আগে সাইবারট্রাকের নাম কেবল অল্প কিছু লোকই জানতো। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে এত বেশি ট্রল ভিডিও হয়েছে যে, সাইবারট্রাক আর ইলন মাস্কের নাম পৌঁছে যায় সর্বস্তরে।
২০২০ সালে ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম হঠাৎই বেড়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। ধারণা করা হয়, সাইবারট্রাক প্র্যাঙ্কই ছিল এর বড় কারণ। ছোট একটি প্র্যাঙ্ক হোক বা ভুল, ইলন সবসময়ই নিজের ফায়দাটা তুলে নিতে ওস্তাদ।
ইলন মাস্ক বরাবরই ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন। এই মনোভাব অবশ্য বেশিরভাগ বিলিয়নিয়ারদের মাঝেই থাকে। ঝুঁকি নিতে পারে বলেই বেশিরভাগ বিলিয়নিয়ারের ইনভেস্টমেন্ট থাকে তাদের কোম্পানির অধীনেই। যেমন, টেসলার মার্কেট ভ্যালু ৬১১ বিলিয়ন ডলার। এতে ইলন মাস্কের অংশ ১২২.২ বিলিয়নের মতো। কিন্তু তিনি যদি শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, তাহলে টেসলার শেয়ারের দামও পড়ে যাবে। এতে কোম্পানির ভ্যালুও কমে যাবে। তাই বিলিয়নিয়ারদের প্রকৃত সম্পত্তি কাগজে যা থাকে, বাস্তবে বিক্রি করতে গেলে তা কিন্তু পাওয়া যায় না।
এই ব্যাপারটি শুধু ইলন নয় – জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট এবং মার্ক জাকারবার্গসহ অন্য বিলিয়নিয়ারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। টেসলার ভ্যালু যেমন বেড়েছে, তেমনি কমতেও পারে। সবসময় এই ঝুঁকির মধ্যেই তারা ব্যবসা করেন। ইলন মাস্কের কথা যদি বলি, তার প্রায় সব সম্পত্তিই টেসলা ও স্পেসএক্সের মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। এসব অভিনব কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ইলন এগুলোকে নিজের মতো করে কাজে লাগান।
ভিউয়ার্স, আপনাদের মনে হয়তো এতক্ষণে প্রশ্ন জেগেছে শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের ছোটবেলাটা কেমন কেটেছে? জন্মই বা কোথায়?
ইলন মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। তিন ভাইবোনের সবার বড় ইলন। বাবা ছিলেন প্রকৌশলী, আর মা মডেল ও পুষ্টিবিদ। তার ভাই কিম্বল পরিবেশবিদ এবং বিনিয়োগকারী, আর বোন টোসকা মাস্ক পুরস্কারপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজের ডিরেক্টর।
ইলন মাস্ক স্বাভাবিক সময়ের বেশ আগেই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ তার জীবনকে ওলটপালট করে দেয়।
তারপরও দমে যাননি ইলন। পড়াশোনার পাশাপাশি একাকিত্ব ঘোঁচাতে কোডিং শেখা শুরু করেন তিনি। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং আর মহাকাশ, এই দুটি বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল প্রবল। আর সে কারণেই মাত্র বারো বছর বয়সে নিজের তৈরি গেম বিক্রি করে আয় করেছিলেন ৫০০ ডলার। ১৯৮৯ সালে কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং পরে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে যথাক্রমে অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি নেন তিনি। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এর কিছুদিন পরই ইলন মাস্ক তার ভাই কিম্বাল মাস্কের সঙ্গে আইটি কোম্পানি ‘জিপ২’ শুরু করেন। এরপর প্রতিষ্ঠা করেন পেপ্যাল। যদিও ২০০২ সালে এটি eBay-র কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। এই বিক্রির টাকায় তিনি সোলার সিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
অনেকেই ভাবেন, পেপ্যালের মতো একটা সম্ভাবনাময় লাভজনক কোম্পানি তিনি কেন বিক্রি করে দিলেন? আসলে ছোটবেলা থেকেই ইলনের যাবতীয় আগ্রহ ছিল পৃথিবীর জলবায়ু ও মহাকাশ নিয়ে। যা তার পরবর্তী কার্যকলাপে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর তৈরি করেন টেসলা কোম্পানি, যা ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে বিপ্লব আনে। টেসলার গাড়িগুলো শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং বিলাসবহুল ও আরামদায়কও।
ইলনের আরেক বড় প্রকল্প স্পেসএক্স। এখানে তিনি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরি করেন। এতে কমেছে জ্বালানি খরচ।
ইলন মাস্ক কখনো থেমে থাকেননি। নানা বাধা অতিক্রম করে, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার সৃজনশীলতা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তাকে অন্যান্য বিলিয়নিয়ারদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। কোনো কিছুতে যদি সত্যিই কেউ বিশ্বাস রাখে এবং পরিশ্রম কর, সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। অসম্ভব বলে কিছুই নেই, ইলন মাস্ক আমাদের সামনে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
ইলন মাস্ক বিলিয়নিয়ার হিসেবে হয়তো সফল, কিন্তু তিনি ভালো আছেন বা আনন্দে আছেন কিনা সেই খবর আমরা ক’জন রাখি। টাকার পিছনে ছুঁটতে গিয়ে ইলন মাস্কের মত ধনীরা- পরিবার আর সুখী জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ইলন মাস্কের মত বিশ্বের সেরা ধনীদের বেশিরভাগেরই কিন্তু একই অবস্থা। তাই সিদ্ধান্তটা আপনার হাতে, আপনি অর্থ-বিত্তের পিছনে ছুটবেন, নাকি পরিবার সহ সবাইকে নিয়ে হাসি আনন্দে কাটবে আপনার জীবন।
ধন্যবাদ সবাইকে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Elon Musk – Zero to Billionaire
Greetings everyone.
In 2020, the world economy was hit hard by the COVID pandemic. But that same year, Elon Musk made $150 billion, becoming the world’s richest person. At the start of the year, his wealth was $27 billion, and by the end, it had jumped to $177 billion. He rose to the top of the list of the world’s richest people.
Elon Musk’s life is full of drama, and it seems he enjoys it. Before we talk about how he made so much money, let’s hear a story.
In 2019, Tesla introduced a new bulletproof vehicle, the “Cybertruck.” They said it was so strong that even the superhero Thor’s hammer couldn’t damage it. This caught a lot of attention, especially from Tesla and electric car fans on social media.
The excitement around the Cybertruck grew even more on its launch day. But then something unexpected happened. To show how strong the truck was, someone threw a small metal ball at its window. The glass shattered. Elon Musk faced public embarrassment, and his dream project took a hit.
But right on stage, Elon Musk promised that the Cybertruck’s bulletproof technology would be perfected and that all the advertised features would be included.
This announcement led to a lot of trolling on social media. “Elon Musk Cybertruck” and “Tesla Cybertruck” became viral topics. Was Elon Musk’s image ruined? Were his bold promises empty?
Some people believe the whole thing was a planned marketing stunt by Elon Musk. They think it was part of a clever strategy! After this incident, over a million people pre-ordered the Cybertruck. It shows that even a mistake can create big opportunities for a brand. Before this event, only a few people knew about the Cybertruck. But thanks to all the meme videos, both the truck and Elon Musk became widely known.
In 2020, the stock prices of Musk’s companies shot up, making him the richest person in the world. Many think the Cybertruck incident played a big part in this. Whether it was a prank or a mistake, Elon Musk knows how to turn it into an advantage.
Elon Musk is a big risk-taker, like many billionaires. Their wealth is often tied to their companies. For example, Tesla’s market value is $611 billion, and Musk’s shares are worth around $122.2 billion. But if he starts selling those shares, Tesla’s value would drop. So, the wealth billionaires have on paper isn’t always what they could get if they sold their assets.
This isn’t just true for Elon Musk; it’s the same for Jeff Bezos, Warren Buffet, and Mark Zuckerberg. Just as Tesla’s value went up, it could also fall. They always run their businesses with this risk in mind. Elon Musk’s wealth is mostly invested in companies like Tesla and SpaceX. These companies are innovative, but they’re also risky, and Elon handles them in his own way.
You might be wondering about Elon Musk’s early life. Where was he born?
Elon Musk was born on June 28, 1971, in Pretoria, South Africa. He is the oldest of three siblings. His father was an engineer, and his mother was a model and dietitian. His brother, Kimbal, is an environmentalist and investor, and his sister, Tosca, is a director of web series.
Elon started school early. When he was just 10, his parents divorced, which turned his life upside down.
But Elon didn’t give up. Along with his studies, he learned coding to deal with his loneliness. He was very interested in computer programming and space. At just twelve, he sold his first game for $500. In 1989, he went to Queen’s University and later attended the University of Pennsylvania, where he earned degrees in Economics and Physics. After that, he enrolled at Stanford University for higher studies. But soon after, Elon and his brother Kimbal started an IT company called Zip2. Later, he founded PayPal, which he sold to eBay in 2002. With that money, he started Solar City.
Many people wonder why he sold a successful company like PayPal. The answer is that Elon’s main interests have always been Earth’s climate and space. His later projects show this clearly. He created Tesla, which changed the electric car industry. Tesla’s cars are not only eco-friendly but also luxurious and comfortable.
Another big project of Elon’s is SpaceX. He developed reusable rockets to lower fuel costs.
Elon Musk never stops. He overcomes many challenges and keeps moving forward with new ideas. His creativity, willingness to take risks, and problem-solving skills make him different from other billionaires. If you believe in something and work hard for it, success will follow. Elon Musk is proof that nothing is impossible.
Elon Musk may be a very successful billionaire, but how happy or content he is, few know. Rich people like Musk often lose touch with family and a joyful life because they are chasing wealth. This is the reality for many of the world’s billionaires. So, the choice is yours—will you chase wealth, or will you enjoy life with your family and loved ones?
Thank you, everyone. Stay healthy and stay happy.