শুভেচ্ছা সবাইকে।
অফিস যেতে আপনি কত সময় আগে বাসা থেকে বের হন? কেউ হয়তো বলবেন, ৩০ মিনিট, কেউ আবার ৩ ঘন্টা। এতো তফাতের কারণ কি? শুধুই দূরত্ব নাকি অন্যকিছু? উত্তরটা খুবই কমন। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম। একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ২ ঘন্টা আর সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা জ্যামেই কাটিয়ে দেন ঢাকার অফিসগামী মানুষ। আর নষ্ট হওয়া এই কর্মঘন্টার দাম অন্তত ৩৭ হাজার কোটি টাকা। কি চোখ কপালে উঠে গেলো। যা দিয়ে বছর বছর একটি করে পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। ভাবতে পারেন রাস্তায় বসে আপনার অপেক্ষার দাম কত।
যদি ধরি, একজন মানুষের স্বাভাবিক অফিস টাইম ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা। তবে এই কর্মঘন্টার সাথে যোগ হয় যানজটে আটকে থাকার সময়টুকু। তারমানে একজন চাকুরীজীবীর ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা অর্থাৎ দিনের তিনভাগের দুইভাগ সময় অফিসে আসা-যাওয়ায় কেটে যাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমের তথ্যমতে, জ্যামের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশে ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। অবশ্য বুয়েটের এআরআই রিপোর্ট বলছে, এই সংখ্যা ৫০ লাখ কর্মঘন্টার কম নয়।
যানজটে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সেই অনেক রোগীর মৃত্যুর খবর আমরা শুনি। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সাম্প্রতিক একটি ঘটনা শেয়ার করি। চাঁদপুরের খায়রুন্নেছা। গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কাঁচপুর আর নিউমার্কেটের দীর্ঘ জ্যামে পড়ে এই নারী অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান। যানজটে পড়ে অফিসে দেরি আর পরীক্ষার হলে যেতে দেরি হওয়াটা তো নিয়মিত ঘটনা।
এতক্ষণ যানজটের নানান ফিরিস্তি দিলাম।
কথার মাঝখানে একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল- সময়ের দাম লাখ টাকা। সবাই কমবেশি শুনেছি, তাইনা? হুট করে কথার মাঝে প্রবাদ কেন? কারণ এখন ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে যে তথ্য আপনাদের দিবো তাতে এই প্রবাদের সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্টের হিসেব অনুসারে, পিক আওয়ারে ট্রাফিক জ্যামের কারণে কর্মঘন্টা নষ্ট, অতিরিক্ত জ্বালানির অপচয়, দূর্ঘটনা আর পরিবেশগত প্রভাবের ক্ষতির আর্থিক অংক দৈনিক ১৫৩ কোটি টাকা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটি কিন্তু সত্য।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নমন্টে এন্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদন বলছে, জ্যামে আটকে থেকেই দিনে পুড়ছে ৪০ শতাংশ তেল। যার দাম ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বোঝা গেল, দুমূল্যের বাজারে অপচয়ের কোন সীমায় গিয়ে ঠেকেছি আমরা।
বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, ২০১০ সালে রাজধানীতে গাড়ির গড় গতি ছিলো ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার। ১০ বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭ কিলোমিটারে। অবশ্য গণমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে এসে তা ৪ কিলোমিটারে গিয়ে ঠেকেছে। তবে কি ঢাকার রাস্তায় গাড়ির গতি আর মানুষের হাঁঠার গতি প্রায় এক? প্রশ্নের উত্তরটি কমেন্ট বক্সে জানাবেন কিন্তু।
এবার বলি যানজট জিডিপিতে কতোটা প্রভাব ফেলছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে জিডিপি কমছে ৬ থেকে ১০ শতাংশ। কেবল রাজধানীর যানজটই খেয়ে ফেলছে জিডিপির ৩ শতাংশ। মানে যানজট দূর করা গেলে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় বাড়ত আরও অন্তত ৬ হাজার টাকা ।
পণ্য আনা নেয়া আর অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে যানজট। জ্যামের কারণে পণ্য পরিবহনে অধিক সময় আর বাড়তি জ্বালানি তেলের প্রয়োজন পড়ায় দাম বাড়ছে পণ্যের। যার মাশুল কিন্তু আমরা পকেট থেকেই দিচ্ছি…মানে ৩০ টাকার সবজি কিনছি ৭০-৮০ টাকায়।
ট্রাফিক জ্যামের সেন্টার পয়েন্ট যেহেতু ঢাকা তাই এই শহরটির একটা বিশ্লেষণ আপনাদের দেই। অবশ্য এই বিশ্লেষণ আমার না, করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স। তাদের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় বসবাসকারীদের চলাচলের জন্য ২৫ ভাগ সড়কের প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র ৭ ভাগ। এতো স্বল্প সংখ্যক সড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে অনবরত। কারণ দেশে ৫৫ লাখ রেজিস্টার্ড গাড়ির মধ্যে ১৯ লাখই ঢাকায়। তার ওপর গত ১০ বছরের ব্যবধানে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
এই বাস্তবতার বাইরেও আরও কিছু বিষয় আছে। এর কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক বটে। যেমন- ধরুন-পকেট একটু ভারী হলেই আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ি। অনেকে তো আবার লোন করে গাড়ি কিনি। আরেক দল আছে- যাদের পরিবারের সবার মাথা গোনা একটি করে গাড়ি। একবারও কি ভেবে দেখেছি- এতো ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ সামালানোর মতো অবস্থা ঢাকার রাস্তা গুলোর আছে কিনা?
ম্যানুয়েল ট্রাফিক সিস্টেম, গাড়ির আলাদা লেন না থাকা, ফুটপাতের অভাব, জলাবদ্ধতা, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাসের ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণ বেশি যাত্রী তোলা’র মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সেই আদিকাল থেকেই বলে যাচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
সেইসাথে সরকার আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঘাঁড়ে দোষ চাঁপানোর অভ্যাস তো আছেই। অবশ্য এই অভ্যাসে অভ্যস্ত করার ক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগেরও দায় কম না। ভিআইপি হর্ণ বাজিয়ে উল্টো পথে আসা গাড়িগুলোকে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া, যত্রতত্র বাসগুলোকে যাত্রী ওঠানোর সুযোগ করে দেয়া, বিশেষ বিশেষ সময়ে অদৃশ্য কিছু কারণে দীর্ঘক্ষণ একটি লেনের গাড়িকে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়া, ঘুষ নিয়ে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের ছেড়ে দেয়ার মতো অভিযোগগুলো তো আছেই। সত্যি বলতে- এসব কারণেই ২০২৩ সালের নামবিউ ট্রাফিক ইনডেক্সে বিশ্বের যানজটের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান পাঁচ নম্বরে পৌছে।
তবে ঢাকার থেকে শোচনীয় শহরও আছে? নাইজেরিয়ার লাওস, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস, কোস্টারিকার সান হোসে, শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহর। এছাড়াও ভারতের মুম্বাই, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, চীনের বেইজিং এর মতো উন্নত শহরগুলোর অবস্থাও যে খুব বেশি ভালো তা কিন্তু নয়। এরমধ্যে বেইজিং তো বিশ্বের দীর্ঘ যানজটের তকমা পেয়েছে। এই শহরে একবার ট্রাফিক জ্যাম ছড়িয়ে পড়েছিলো দীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার। সেই জ্যাম ছাড়তেও সময় লেগেছিলো ১২ দিন।
দেশ-বিদেশের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ হয়েছে। এতোক্ষণ সে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, সেগুলো নিয়ে সরকারেরও যথেষ্ট মাথাব্যাথা আছে। আর সেসব দিক মাথায় রেখেই সরকার ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে, ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর কয়েকটি পুরোপুরি এবং বেশ কিছু আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এসব উন্নয়ন দেখতে আপেক্ষার পাশাপাশি এখন প্রয়োজন ট্রাফিক আইন বিষয়ে জনসচেতনতা, হয়তো তাহলে ঘন্টায় ৪ কিলোমিটার গাড়ির গতি অনেক বাড়িয়ে আনা সম্ভব। তাই আসুন, পরিবর্তনটা শুরু করি ঘর থেকেই। নিজে মেনে চলি ট্রাফিক আইন, সেই সাথে মানতে উৎসাহিত করি অন্যদেরও। কারণ সরকার আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত চেষ্টাই পারে যানজটহীন আবাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে। যে নগরে আগামী প্রজন্ম পাবে সময়ের আগে গন্তব্যে পৌছানোর জাদুর কাঠি।
ধন্যবাদ সবাইকে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Traffic jam
Greetings to all.
How long before you leave home to go to the office? Some may say 30 minutes, some say 3 hours. What is the reason for such a difference? Just distance or something else? The answer is very simple. Dhaka traffic jam. The information of several research reports says that office going people of Dhaka spend at least 2 hours and maximum 5 hours in jam every day. And the cost of this wasted working hours is at least 37 thousand crore rupees. What eyes went up to the forehead with which it is possible to build one Padma Bridge year after year. You can imagine the cost of your waiting on the street.
Assuming, a person’s normal office time is 8 to 10 hours maximum. However, these working hours add to the time of being stuck in traffic. This means that 12 to 16 hours of an employee, i.e. two-thirds of the day, is spent commuting to and from the office. According to the country’s media, 3.2 million working hours are lost every day in Bangladesh due to traffic jams. However, BUET’s ARI report says that this number is not less than 50 million working hours.
We hear the news of many patients dying in ambulances in traffic jams. Although there are no exact statistics, let me share a recent incident. Khairunnecha of Chandpur. He was seriously ill and left for Suhrawardy Hospital in Dhaka. This woman died in the ambulance after falling into a long traffic jam in Kanchpur and Newmarket. Getting late to the office due to traffic jams and getting late to the exam hall is a regular occurrence.
So far I have given various complaints about traffic congestion.
In the middle of the speech, I remembered a proverb – time is worth lakhs of taka. Everyone has heard more or less, right? Why is the proverb between the words suddenly? Because now you will feel the truth of this proverb in the information that I will give you about traffic jam. According to a report by BUET’s Accident Research Institute, the financial toll of loss of working hours, excess fuel wastage, accidents and environmental impact due to traffic jams during peak hours is Rs 153 crore daily. It seems unbelievable but it is true.
According to the BRAC Institute of Government and Development report, 40 percent of the oil is burned in a day due to being stuck in the jam. The price of which is 4 crore 20 lakhs. It was understood that we have reached the limit of waste in the two-price market.
World Bank research says that in 2010, the average speed of cars in the capital was 21 km per hour. In a gap of 10 years i.e. in 2020 it has reduced to 7 km. However, media reports say that in 2023, it has reached 4 km. But is the speed of the car and the speed of walking on the streets of Dhaka almost the same? Answer the question in the comment box.
Now let’s say how much traffic congestion is affecting the GDP. GDP is reduced by 6 to 10 percent due to traffic jams. Traffic congestion in the capital alone eats up 3 percent of GDP. It means that if the traffic congestion is removed, the average per capita income of Bangladesh would increase by at least 6 thousand taka.
Traffic congestion affects the transportation of goods and internal trade. Due to jams, more time is required to transport the goods and the need for extra fuel increases the price of the goods. But we are paying from our pocket… means we are buying vegetables worth 30 taka for 70-80 taka.
Since Dhaka is the center point of traffic jams, I will give you an analysis of this city. Of course, this analysis is not mine, it was done by the Bangladesh Institute of Planners. Their report says that 25 percent of roads are needed for the movement of people living in Dhaka. But there are only 7 parts. The pressure of vehicles on such a small number of roads is increasing continuously. Because out of 55 lakh registered vehicles in the country, 19 lakh are in Dhaka. On top of that, the number of private cars in Dhaka has doubled in the last 10 years.
There are other things beyond this reality. Some of it is personal. For example, if the pocket is a little heavy, we tend to buy a private car. Many people take a loan to buy a car. There is another group – whose family has one car per head. Have you ever thought – whether the roads of Dhaka have the condition to handle the pressure of so many private cars?
Experts have been talking about issues such as manual traffic system, lack of separate lanes for vehicles, lack of footpaths, waterlogging, buses standing in the middle of the road and picking up passengers 5 times more than the capacity of the buses since the early days. But who listens to whom?
Also there is a habit of blaming the government and related departments. However, the responsibility of the traffic department is not less in getting used to this practice. Allegations are there like allowing vehicles coming in the opposite direction by blowing the VIP horn, allowing buses everywhere to pick up passengers, allowing vehicles to move in one lane for long periods of time due to some unseen reason, letting off the traffic law violators with bribes. To tell the truth – because of these reasons, Dhaka’s position has reached number five in the list of world’s most congested cities in the 2023 Nambyu Traffic Index.
But there are cities worse than Dhaka? Laos of Nigeria, Los Angeles of the United States, San Jose of Costa Rica, Colombo city of Sri Lanka. Also, the condition of developed cities like Mumbai in India, London in United Kingdom, Beijing in China is not very good. Meanwhile, Beijing has the title of longest traffic jam in the world. This city once had a traffic jam spread over 100 km long. It took 12 days to leave that jam.
There have been many judgments and analyzes about traffic jams in the country and abroad. I have tried to bring those things before you for so long, the government has enough headache about them. And keeping those aspects in mind, the government has undertaken several mega projects including Padma Setu, Metrorail, Elevated Expressway, Mass Rapid Transit, Karnaphuli Tunnel, Chittagong Cox’s Bazar Railway to alleviate traffic jams. Some of these have been fully and several partially completed.
In addition to waiting to see these developments, public awareness about traffic laws is needed now, maybe then it is possible to increase the speed of 4 km per hour vehicles. So let’s start the change from home. Adhere to the traffic laws and encourage others to do so. Because along with the initiatives of the government and related departments, everyone’s collective efforts can build a livable city without traffic congestion. The city where the next generation will get the magic wand to reach the destination ahead of time.
Thanks everyone. Stay healthy, stay well.