শুভেচ্ছা সবাইকে।
স্মার্টওয়াচের যুগে যখন ঘড়ি মানেই নোটিফিকেশন, ফিটনেস ট্র্যাকিং আর ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি। তবে পৃথিবীতে কিছু ব্র্যান্ড আছে যারা প্রযুক্তির এই দৌড়ে নেই। তাদের কাছে ট্রেন্ড নয়, ট্র্যাডিশনই ফ্যাক্ট। এমনই এক ব্র্যান্ড রোলেক্স। যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাক্সারি, আভিজাত্য আর কালজয়ী স্ট্যাটাসের ছবি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ডিজিটাল এই যুগেও রোলেক্স কীভাবে তার জায়গা ধরে রেখেছে? কী সেই রহস্য যা প্রতিযোগীদের থেকে এই ব্র্যান্ডকে আলাদা করেছে? চলুন জানা যাক সেই রহস্য উন্মোচন…
শুরু করি কিছু অবিশ্বাস্য ফ্যাক্ট দিয়ে। আপনারা কি জানেন- রোলেক্স ঘড়ি সমুদ্রের ১১ কিলোমিটার নীচে থেকেও নির্ভুল সময় দেখাতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি! ১৯৬০ সালে রোলেক্স ডিপ সি স্পেশাল মডেলটি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পরীক্ষা করা হয়েছিল। যেখানে পানির চাপ এতটাই বেশি যে একটি সাবমেরিনও চূর্ণ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রোলেক্স সেখানেও পারফেক্টলি কাজ করেছিল। আরেকটি মজার তথ্য- আপনি যদি এখন একটি নতুন রোলেক্স কিনতে চান, তাহলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে গড়ে ৩ থেকে ৫ বছর। শুধু কি তাই, লেগাসির কারণে একটি ১৯৯০ সালের রোলেক্স ঘড়ি আজ তার আসল দামের চেয়ে ১০ গুণেরও দাম বেশি দিয়ে।
এই ব্র্যান্ড তৈরির পেছনেও আছে দারুণ একটি ইতিহাস। ১৮৯৩ সাল। জার্মানির এক ছোট গ্রামে ১২ বছর বয়সী হান্স উইলসডর্ফ জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখছে। হঠাৎ- দুঃসংবাদ! পিতামাতা দুজনেই এক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। হান্সের হাতে শুধু কিছু সঞ্চয়, আর… একটি ভাঙা পকেট ওয়াচ। বাবা তাকে বলতেন, সময় কখনো থেমে থাকে না, হান্স। থামে শুধু যারা হার মেনে নেয়।
আত্মীয়রা তার পিতা-মাতার ব্যবসা বিক্রি করে এতিম হান্সকে পাঠিয়ে দেয় বোর্ডিং স্কুলে। সেখানে এক সুইস বন্ধু তাকে শোনায় সুইজারল্যান্ডের জাদুকরী গল্প- যেখানে পাহাড়ের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সেরা ঘড়ি কারিগররা! এই গল্প হান্সের মধ্যে ঘড়ির প্রতি ব্যাপক আগ্রহী করে তোলে। সবচেয়ে নির্ভুল ঘড়ি বানানোর স্বপ্ন বুনতে শুরু করে সে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯০০ সালে, ১৯ বছর বয়সে জার্মানি ছেড়ে পাড়ি দেয় সুইজারল্যান্ডে। সেখানে কুনা কোর্টেন নামের একটি ঘড়ির কোম্পানিতে কাজ শুরু করে। তার দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন শতশত ঘড়ি ঠিকভাবে চলে কিনা তা পরীক্ষা করা, এই কাজ ঘড়ির প্রতি তার ফ্যাসিনেশন আরও বাড়িয়ে দেয়।
১৯০৩ সালে হ্যান্স লন্ডনে থাকবেন বলে ঠিক করেন। যেই ভাবা সেই কাজ। রওনা দিলেন। লন্ডনের ট্রেনে হান্সের ব্যাগে লুকানো ছিল ৩,৩০০ গোল্ড মার্ক- সারা জীবনের সঞ্চয়! লন্ডনে ট্রেন থামল, হঠাৎই ব্যাগ উধাও! এটি তার জীবনের একটি বড় ধাক্কা ছিল। কিন্তু হান্স কাঁদেনি। সঞ্চয় হারিয়ে লন্ডনে চাকরি নিলেন আরেকটি ঘড়ির কোম্পানিতে। দায়িত্ব ছিলো বিপনন ও বিত্রুয়। দুইবছর বিপননে কাজ করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করলেন, বেশিরভাগ ঘড়ি নির্মাতা কোম্পানি তাদের ঘড়িকে আকর্ষণীয় ও সাজানো-গোছানোর দিকেই বেশি নজর দেয়, অথচ গ্রাহকদের চাওয়া সাদামাটা, টেকসই ও মার্জিত ঘড়ি।
এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, ২৪ বছর বয়সী হান্স সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি নিজের ঘড়ি তৈরির ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু ছিল এক বড় সমস্যা – পুঁজি। তাই পুঁজির বিনিময়ে কাছের এক আত্মীয়কে ব্যবসায়িক অংশীদার বানালেন। ১৯০৫ সালে উইলসডর্ফ অ্যান্ড ডেভিস নামে শুরু হয় তাদের নতুন কোম্পানি। কিছুদিন পর তারা উপলব্ধি করল যে, ঘড়ি ভ্রমণকারীদের জন্য অপরিহার্য একটি জিনিস, কারণ তাদের সময়মতো ট্রেন এবং বাস ধরতে হয়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল, ভ্রমণকারীদের জন্য পকেট ঘড়ি তৈরি করবে। সাধারণ ঘড়ির তুলনায় এই ঘড়িটি আকারে ছোট ছিল, যাতে ভ্রমণকারীদের জন্য সহজে বহনযোগ্য হয়। এই ঘড়ির পাউচটি উচ্চমানের চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে এটি আরও প্রিমিয়াম দেখায়। এই ঘড়িটি পোর্টফোলিও পকেট ওয়াচ নামে পরিচিত ছিল বেশি। কোম্পানির প্রথম পণ্য হওয়ার পরেও এটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। পকেট ঘড়ি দিয়ে কোম্পানি শুরু করলেও হান্স চাইতেন না যে কোম্পানিটি শুধুমাত্র পকেট ঘড়ি তৈরিতে সীমাবদ্ধ থাকুক।
হান্স উঠেপড়ে লাগলেন হাতঘড়ি তৈরিতে। কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্য জায়গায়। সে সময় হাতঘড়িকে মহিলাদের ফ্যাশন অ্যাকসেসরি হিসেবেই দেখা হত। আর পুরুষরা ব্যবহার করত পকেট ওয়াচ। একদিন হান্স লক্ষ করলেন ব্রিটেনে পুরুষরা নিয়মিতভাবে ব্রেসলেট পরছেন। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই তার মাথায় একটি যুগান্তকারী আইডিয়া এল। তিনি বুঝতে পারলেন, সমস্যাটি ডিজাইনে নয়, বরং মানুষের ধারণায়। তখনই হান্স একটি চতুর কৌশল নিলেন। তিনি হাতঘড়ি বাজারে আনলেন বটে, কিন্তু সেগুলোকে ‘রিস্টওয়াচ’ নামে নয়। বরং সেগুলোকে বাজারজাত করলেন ব্রেসলেট ওয়াচ নামে। এই ঘড়িগুলোতে তিনি ব্যবহার করলেন স্বর্ণ ও রূপার স্ট্র্যাপ, যা দেখতে ছিল ঠিক ব্রেসলেটের মতো। চামড়ার স্ট্র্যাপের পরিবর্তে এই ধাতব ডিজাইন পুরুষদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সহায়ক হয়েছিল। মজার বিষয় হলো, এই ব্রেসলেট ওয়াচ-ই আসলে ছিল রোলেক্সের প্রথম দিকের রিস্টওয়াচ। হান্সের এই স্ট্র্যাটেজি কাজে লেগে যায়। ধীরে ধীরে মানুষ রিস্টওয়াচকে পুরুষদের জন্যও উপযুক্ত মনে করতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যরা রিস্টওয়াচের ব্যবহারিক সুবিধা উপলব্ধি করলে, এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে।
হান্সের সবসময় তার ঘড়ির জন্য বিশেষ নাম খুঁজতেন। যে নামটি তার ঘড়ির ডায়ালে সহজে ফিট হবে এবং সহজে উচ্চারণও করা যাবে। আর সেকারণেই তিনি বিভিন্ন অক্ষরকে একত্রিত করে ১০০টিরও বেশি নাম তৈরি করেছিলেন। এক সময়ে, তার কাছে রোলেক্স নামটি খুবই সুন্দর মনে হলো। তিনি ১৯০৮ সালে এই নামটি ট্রেডমার্ক করেন। কিন্তু শুধু একটি নামই যথেষ্ট ছিল না। হান্স লক্ষ্য করলেন, রিস্টওয়াচের ক্ষুদ্রাকৃতির মুভমেন্ট সঠিক সময় নির্দেশনে সমস্যা সৃষ্টি করছে। তখনকার দিনে বেশিরভাগ কোম্পানিই সুইজারল্যান্ড থেকে মুভমেন্ট আমদানি করত। কিন্তু হান্স ভিন্ন পথ বেছে নিলেন – তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই তৈরি করবেন বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল মুভমেন্ট। পরবর্তী কয়েক বছর তিনি ঘড়ি প্রযুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা শুরু করলেন। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সেরা ঘড়ি কারিগরদের সাথে দেখা করলেন। অবশেষে ১৯১০ সালে তিনি তৈরি করলেন “ফিফটিন লাইন ক্যালিবার টু হান্ড্রেড” (15 Line caliber 200) মুভমেন্ট, যা ছিল একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এই মুভমেন্টটি যখন সুইজারল্যান্ডের অফিসিয়াল ক্রোনোমিটার টেস্টিং ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়, তখন কারিগররা অবাক হয়ে গেলেন। পরীক্ষায় দেখা গেল, এটি শুধু সাধারণ ঘড়িই নয়, বরং বিশ্বের প্রথম রিস্টওয়াচ মুভমেন্ট যা ক্রোনোমিটার সার্টিফিকেট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য রোলেক্সকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়, রোলেক্সের খ্যাতি ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালির অভিজাতরা রোলেক্স ঘড়ি পরতে শুরু করেন।
১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধের খরচ মেটাতে হুট করে ঘড়ির উপর ৩৩% রপ্তানি শুল্ক আরোপ করায় রোলেক্স ঘড়ির দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে গেল। বিদেশী বাজারে প্রতিযোগীদের তুলনায় রোলেক্সের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিক্রি হঠাৎ করেই কমে গেল। এই সংকট মোকাবেলায় হান্স একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কোম্পানির সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডে স্থানান্তর করলেন। তখন পর্যন্ত রোলেক্স ছিল শুধুমাত্র একটি ব্র্যান্ডের নাম। সুইজারল্যান্ডে স্থানান্তরের পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রোলেক্স ওয়াচ কোম্পানি লিমিটেড রাখলেন। তারপরও ব্যবসা ছিল মন্দা।
হান্স হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সঠিক সময় জানতে সৈন্যদের মধ্যে পকেট ওয়াচের চেয়ে রিস্টওয়াচের চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে রোলেক্স বিশেষ ধরনের ট্রেঞ্চ ওয়াচ বাজারজাত করল। এই ঘড়িগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছিল অত্যন্ত মজবুত কাচ, শক্তিশালী কাঠামো এবং লিউমিনেসেন্ট রেডিয়াম, যা অন্ধকারেও সময় দেখতে সাহায্য করত। যুদ্ধের এই কঠিন সময়েও রোলেক্সের ব্যবসা টিকে থাকল এই ট্রেঞ্চ ওয়াচের কল্যাণে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ফিরে আসা সৈন্যরা তাদের রিস্টওয়াচ পরেই থাকলেন। সাধারণ মানুষ যখন তাদের নায়কদের হাতে রিস্টওয়াচ দেখল, তারাও রিস্টওয়াচ পরতে শুরু করল। এভাবেই হান্সের সেই দূরদর্শী চিন্তা সফলতার মুখ দেখলো।
তবে রিস্টওয়াচের একটি বড় সমস্যা ছিল ধুলো ও পানি প্রবেশ করা। এই সমস্যা সমাধানে হান্স একটি অভিনব উদ্ভাবন নিয়ে এলেন। তিনি এমন একটি ঘড়ির কেস ডিজাইন করলেন যা ঘড়ির যন্ত্রাংশকে ধুলাবালি, পানি ও তাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবে। এই সমস্যা সমাধানে আনলেন স্ক্রু-অন মেকানিজম। এই পদ্ধতিতে ঘড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ শক্তভাবে স্ক্রু করে বন্ধ করা হত। এছাড়া রাবারের রিং ব্যবহার করে সব ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দেওয়া হত। এই অভিনব ডিজাইনের কারণে পানির নিচেও ভালোভাবে কাজ করতে পারত ঘড়ি। এই ধরনের অভিনব ঘড়ি তৈরি করে এর নাম দিলেন অয়স্টার। শামুকের খোলসের আকৃতির এই ঘড়ি ১৯২৬ সালে বাজারে আসার পর দারুণ সাড়া ফেলেছিলো। হান্স এই ঘড়ির ব্রান্ডিংয়ের জন্য অ্যাম্বাসেডর বানিয়েছিলেন সাঁতারু মার্সিডিস গ্লাইটজেকে। ঘড়ি হাতে তাকে দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার মিশনে নেমেছিলেন। যদিও মার্সিডিস সম্পূর্ণটা পাড়ি দিতে পারেনি। কিন্তু ১০ ঘণ্টা সাঁতারের পরও তার রোলেক্স ঘড়িটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী ছিল। এই ঘটনা রোলেক্স অয়স্টারের ওয়াটারপ্রুফ মেকানিজমকে বিশ্বের কাছে আরও বেশি পরিচিতি করে তুলেছিল।
হান্স উইলসডর্ফের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল এমন একটি ঘড়ি তৈরি করা যা নিজে থেকেই চলবে। ১৯৩১ সালে তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলেন পারপেচুয়াল রোটর আবিষ্কারের মাধ্যমে। এই প্রযুক্তির ফলে হাতের মুভমেন্ট থেকেই ঘড়ির ব্যাটারি চার্জ হতো! এই আবিষ্কার রোলেক্সকে ঘড়ি শিল্পের শীর্ষে পৌঁছে দিল। কিন্তু ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নতুন সংকট দেখা দেয়। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, রোলেক্সের বিক্রি হঠাৎ করেই কমে যায়।
কিন্তু হান্স ছিলেন লড়াকু এক যোদ্ধা। ১৯৪৫ সালে রোলেক্সের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি উপহার দিলেন আরেক যুগান্তকারী মডেল- ডেটজাস্ট। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি যাতে তারিখ দেখা যেত। তবে প্রথম দিকে ছোট ডেট উইন্ডো নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।এই সমস্যার সমাধানটিও এসেছিল এক দুর্ঘটনা থেকে! একদিন হান্স লক্ষ করলেন, ঘড়ির গ্লাসে পানি পড়ায় তারিখটি বড় দেখাচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি ডেটজাস্টে যুক্ত করলেন সাইক্লোপস লেন্স অর্থাৎ একটি বিশেষ ম্যাগনিফাইং গ্লাস যা তারিখকে ২.৫ গুণ বড় করে দেখাতো।
ঘড়ির দুনিয়ার অসাধারণ সব আবিষ্কার আর বর্ণময় এক জীবন কাটানোর পর ১৯৬০ সালে, ৭৯ বছর বয়সে মারা যান রোলেক্সের মহান উদ্ভাবকস হান্স উইলসডর্ফ।
অনেকের কাছে ঘড়ি রাজ্যে হান্সের এই একক আধিপত্যের বিষয়টি বাড়াবাড়ি বা নাটকীয় মনে হতে পারে। প্রতিযোগিতার বাজারে নামলে দেখা যাবে- একটি সাধারণ রোলেক্স সাবমেরিনারের দাম ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে। তবে কি দামি বলেই রোলেক্সের এতো চাহিদা আজও? কিন্তু প্যাটেক ফিলিপ বা অডেমার্স পিগেটের মতো দামী ব্র্যান্ডের ঘড়ির দামও ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো, ২০২৩ সালে রোলেক্সের আয় ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘড়ির ব্র্যান্ড প্যাটেক ফিলিপের আয়ের ১০ গুণেরও বেশি! বুঝতেই পারছেন, রোলেক্স শুধু দামের কারণেই রোলেক্স সেরা, এমনটিও নয়। অন্যদিকে, বর্তমানে অনেক স্মার্টওয়াচও পাওয়া যায় যেখানে রোলেক্সের চেয়ে অনেক বেশি ফিচার পাওয়া যায়, তবু রোলেক্সের তুলনা কি সেসবের সাথে হয়?
মোটা দাগে যদি বলি, রোলেক্সের সাফল্যের পেছনে তিনটি মূল কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, তারা কখনোই ট্রেন্ডের পিছনে ছোটেনি, বরং নিজেরাই ট্রেন্ড সেট করেছে। দ্বিতীয়ত, তারা তাদের প্রোডাক্টকে শুধু একটি টাইমপিস না ভেবে স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তৃতীয়ত, রোলেক্স কখনোই তার কোয়ালিটি কমায়নি। যার কারণে স্মার্টওয়াচের এই যুগে রোলেক্সের চাহিদা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। অনেকেই এখন রোলেক্সকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখে। গত ১০ বছরে রোলেক্সের দাম গড়ে ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনেক স্টক মার্কেটকেও ছাড়িয়ে গেছে।
১২ বছর বয়সে এতিম হওয়া হান্স উইলসডর্ফ প্রমাণ করে গেছেন, সত্যিকারের সাফল্য আসে ধৈর্য আর নিষ্ঠা থেকে। রোলেক্সের গল্প শুধু একটি ঘড়ি কোম্পানির গল্প নয়, এটি একটি স্বপ্ন দেখার এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের গল্প। অ্যাডিডাস-পুমা কিংবা বাটা নিয়েও এমন চমৎকার গল্প আছে, ডেসক্রিপশন বক্স ও পিন কমেন্টে থাকা লিংক থেকে দেখে আসতে পারেন সে ভিডিওগুলোও।
ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়েও রোলেক্স যে এখনো প্রাসঙ্গিক, সেটাই প্রমাণ করে ট্রু লাক্সারি কখনো আউটডেট হয় না। আপনার কি মনে হয়? আর আপনার পছন্দের ঘড়ির ব্র্যান্ড কী? কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
How a Poor Boy Created Rolex!
Greetings to everyone.
In the era of smartwatches, when watches mean notifications, fitness tracking, and Bluetooth connectivity. But there are some brands in the world that are not part of this technology race. For them, trend is not the fact, tradition is fact. One such brand is Rolex. Just hearing the name brings to mind luxury, prestige, and timeless status. But the question is, how has Rolex maintained its position even in this digital age? What is the secret that sets this brand apart from competitors? Let’s uncover that secret…
Let’s start with some unbelievable facts. Did you know – a Rolex watch can show accurate time even from 11 kilometers under the sea? Sounds surprising but it’s true! In 1960, the Rolex Deep Sea Special model was tested at the depths of the Mariana Trench. Where the water pressure is so high that even a submarine can be crushed. But Rolex worked perfectly even there. Another interesting fact – if you want to buy a new Rolex now, you have to wait on average 3 to 5 years. Not only that, due to legacy, a Rolex watch from 1990 can now sell for more than 10 times its original price.
There is also a fascinating history behind the making of this brand. In 1893, in a small village in Germany, 12-year-old Hans Wilsdorf was watching snowfall through a window. Suddenly – bad news! Both his parents died in an accident. Hans was left with just some savings and… a broken pocket watch. His father used to say, “Time never stops, Hans. Only those who give up do.”
Relatives sold his parents’ business and sent the orphan Hans to a boarding school. There, a Swiss friend told him magical stories about Switzerland – where the world’s best watchmakers are hidden under the mountains! This story sparked Hans’s great interest in watches. He began dreaming of making the most precise watches. To fulfill this dream, in 1900, at the age of 19, he left Germany for Switzerland. There he started working at a watch company called Kuno Courten. His job was to check hundreds of watches every day to see if they worked correctly; this increased his fascination for watches even more.
In 1903, Hans decided to live in London. Just as he thought, he set off. On the train to London, Hans had 3,300 gold marks hidden in his bag – his lifetime savings! When the train stopped in London, suddenly the bag disappeared! This was a big shock in his life. But Hans did not cry. Losing his savings, he took a job in another watch company in London. His responsibility was marketing and distribution. After two years working in marketing, he noticed that most watchmaking companies focused more on making their watches attractive and fancy, but customers wanted simple, durable, and elegant watches.
To change this situation, 24-year-old Hans decided to start his own watchmaking business. But there was a big problem – capital. So, in exchange for capital, he made a close relative his business partner. In 1905, their new company named Wilsdorf and Davis started. Soon they realized that watches were an essential item for travelers because they had to catch trains and buses on time. So, they decided to make pocket watches for travelers. Compared to ordinary watches, this watch was smaller in size to be easily portable for travelers. The pouch for this watch was made of high-quality leather to make it look more premium. This watch was mostly known as the Portfolio Pocket Watch. Even though it was the company’s first product, it became very popular. Although the company started with pocket watches, Hans did not want the company to be limited to only making pocket watches.
Hans eagerly began making wristwatches. But the problem was elsewhere. At that time, wristwatches were seen as fashion accessories for women. Men used pocket watches. One day Hans noticed that men in Britain regularly wore bracelets. From this observation, a revolutionary idea came to his mind. He realized the problem was not in design but in people’s perception. Then Hans took a clever strategy. He did bring wristwatches to the market but did not call them ‘wristwatches’. Instead, he marketed them as bracelet watches. These watches used gold and silver straps, which looked just like bracelets. This metal design helped gain acceptance among men instead of leather straps. Interestingly, these bracelet watches were actually Rolex’s early wristwatches. Hans’s strategy worked. Gradually, people started to consider wristwatches suitable for men too. During World War I, soldiers realized the practical benefits of wristwatches, and their popularity increased further.
Hans always looked for special names for his watches. Names that would fit easily on the dial and be easy to pronounce. For that, he created more than 100 names by combining different letters. At one point, he found the name Rolex very beautiful. He trademarked this name in 1908. But just a name was not enough. Hans noticed that the small movements of wristwatches caused problems in accurate timekeeping. At that time, most companies imported movements from Switzerland. But Hans chose a different path – he decided to make the world’s most precise movement himself. Over the next few years, he began deep study of watch technology. He met with the best watchmakers from Switzerland, Germany, and France. Finally, in 1910, he made the “Fifteen Line Caliber 200” movement, which was a revolutionary innovation. When this movement was sent to the official chronometer testing institute in Switzerland, the craftsmen were amazed. The test showed that it was not just an ordinary watch but the world’s first wristwatch movement capable of achieving a chronometer certificate. This success took Rolex one step ahead, and its reputation spread across Europe. The elite in Germany, France, and Italy started wearing Rolex watches.
In 1914, when the British government suddenly imposed a 33% export duty on watches to cover war expenses, Rolex watch prices rose sharply. Because of the price increase, sales suddenly dropped compared to competitors in foreign markets. To face this crisis, Hans took a bold decision. He moved the company’s headquarters to Switzerland. Until then, Rolex was only a brand name. After relocating to Switzerland, he formally changed the company name to Rolex Watch Company Limited. Still, business was slow.
One day Hans noticed that during the war, soldiers increasingly preferred wristwatches over pocket watches to know the correct time. Taking advantage of this opportunity, Rolex marketed a special type of trench watch. These watches used very strong glass, sturdy construction, and luminescent radium, which helped to see the time even in the dark. Thanks to this trench watch, Rolex business survived even during the difficult war times.
After World War I, returning soldiers continued to wear their wristwatches. When ordinary people saw their heroes wearing wristwatches, they also started to wear wristwatches. Thus Hans’s farsighted thinking met with success.
But wristwatches had a big problem – dust and water entry. To solve this, Hans introduced an innovative invention. He designed a watch case that could completely protect the watch’s mechanism from dust, water, and heat. To solve this problem, he introduced the screw-on mechanism. In this method, various parts of the watch were tightly screwed shut. Also, rubber rings were used to close all gaps. Due to this innovative design, the watch could work well underwater. He named this innovative watch Oyster. This watch, shaped like a seashell, was launched in 1926 and created a huge sensation. Hans made the swimmer Mercedes Gleitze an ambassador for this watch. He took on the mission to swim across the English Channel with the watch on his wrist. Although Mercedes could not complete the whole swim, her Rolex watch remained fully functional even after 10 hours of swimming. This event made Rolex Oyster’s waterproof mechanism even more famous worldwide.
Hans Wilsdorf’s next goal was to make a watch that could run by itself. In 1931, he fulfilled that dream by inventing the perpetual rotor. This technology allowed the watch’s battery to charge from the movement of the hand! This invention took Rolex to the top of the watch industry. But in 1939, when World War II began, a new crisis appeared. Due to the war, supply systems worldwide broke down, and Rolex sales suddenly dropped.
But Hans was a fighting warrior. In 1945, on Rolex’s 40th anniversary, he gifted another revolutionary model – Datejust. It was the world’s first automatic watch that displayed the date. However, initially, there was a problem with the small date window. The solution to this problem also came from an accident! One day Hans noticed that water on the watch glass made the date appear bigger. From this observation, he added the Cyclops lens to the Datejust – a special magnifying glass that enlarged the date by 2.5 times.
After a life full of incredible inventions in the watch world, Rolex’s great innovator Hans Wilsdorf died in 1960 at the age of 79.
For many, Hans’s solo dominance in the watch kingdom may seem exaggerated or dramatic. If you enter the competitive market, you will see that a typical Rolex Submariner costs between 20 to 50 lacs taka. But is Rolex’s demand still so high just because it’s expensive? Watches from expensive brands like Patek Philippe or Audemars Piguet can also cost more than 5 million taka.
Interestingly, in 2023, Rolex’s income was about 15 billion dollars, which is more than 10 times the income of its nearest competitor watch brand Patek Philippe! You can understand that Rolex is not the best just because of its price. On the other hand, nowadays many smartwatches offer many more features than Rolex, yet can Rolex be compared to those?
In short, three main reasons have worked behind Rolex’s success. First, they never chased trends, but rather set their own trend. Second, they established their product not just as a timepiece but as a status symbol. Third, Rolex never compromised on its quality. Because of this, demand for Rolex has increased more than ever in this smartwatch era. Many now see Rolex as an investment. Over the past 10 years, the price of Rolex has increased by an average of 300%, surpassing many stock markets.
Hans Wilsdorf, who became an orphan at 12, has proven that true success comes from patience and dedication. The story of Rolex is not just a story of a watch company, but a story of dreaming and realizing that dream. Adidas-Puma and Bata also have such wonderful stories; you can watch those videos from the links in the description box and pinned comment.
That Rolex is still relevant in the digital age proves that true luxury never goes out of date. What do you think? And what is your favorite watch brand? You can let us know in the comments.
Thank you all.
Stay healthy, stay well.
