ভিক্ষা নাকি অভিনয়?
শুভেচ্ছা সবাইকে!
ভিক্ষুক। শব্দটি শুনে নিশ্চয়ই মনে একটা সন্দেহ জাগছে। যদি ভুল না করি সন্দেহটা অনেকটা এমন- আসলেই কি ভিক্ষুক নাকি প্রতারক? আমাদের মনে কেন এমন সন্দেহ জাগে? নির্দ্বিধায় কেন বিশ্বাস করতে পারিনা? কারণটা কি?
একটা ছোট্ট গল্প বলি! অবশ্য এটাকে গল্প না বলে বাস্তব অভিজ্ঞতা বলাই ভালো। কারণ এটা আমার নিজের ঘটনা।
প্রতিদিন অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে, প্রায়ই একটা লোককে গাড়ির জানালায় টোকা দিয়ে সাহায্য চাইতে দেখি। কয়েকবার জানালার কাঁচ নামিয়ে সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করেছি। আপনারা সামনাসামনি দেখলে হয়তো একই কাজ করতেন। কারণ, যে মানুষটির হাত-পাসহ পুরো শরীরটাই সার্বক্ষণিক কাঁপতে থাকে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তার তো আর কাজ করে আয় রোজগারের সুযোগ নেই। মানুষের সাহায্য ছাড়া তার আর কী উপায় বলুন! বর্ণনা শুনে আপনারও নিশ্চয়ই একটু কষ্ট হচ্ছে, তাই না?
এমন চিত্র ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের বহু জায়গায় দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমার ঘটনায় চমকটা অন্য জায়গায়? এই যে এতো দরদ দিয়ে এতোক্ষণ যার কথা বলেছি, তাকে ভিক্ষুক না বলে, একজন দক্ষ অভিনেতা বলাই ভালো।
অভিনেতা কেন বলছি শুনুন তাহলে… একদিন হুট করেই জানতে পারি, লোকটা সম্পুর্ণ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। এমন কাঁপাকাঁপির কোন রোগ তার নেই। এমনকি চায়ের দোকানে স্বাভাবিক মানুষের মতোই সে চা খায়, আড্ডা দেয়। আবার সিগন্যালে গাড়ি দেখলেই কাঁপাকাঁপি রোগ শুরু হয়ে যায়। আর পুরো অভিনয়টা এতোটাই নিখুঁত, বোঝার উপায় নেই, অন্তত আমি ধরতে পারিনি। এখন বলুন, বিশ্বাসটা কাকে করবেন?
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যখন অসুস্থ সেজে সাহায্য চাইতে আসে, আর তা যখন আমরা টের পেয়ে যাই তখন কিন্তু ভিক্ষুকদের ওপর থেকে আমাদের বিশ্বাস উঠে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবে যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদেরও প্রতারক ভেবে এড়িয়ে চলতে শুরু করি।
সত্যি বলতে, ভিক্ষাটাকে অভিনয় বানিয়ে ফেলার পেছনে কিছু সিন্ডিকেট কাজ করে। তাদের কারণেই ঢাকা শহরে ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য ভিক্ষুক যারা শারীরিকভাবে অক্ষম সেজে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়ে আর্থিক সাহায্য চেয়ে বেড়ায়। তাদের প্রতিদিনকার আয়-রোজগারও বেশ ভালো।
মানবজমিন পত্রিকায় ২০১৮ সালে এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে, ঢাকা শহরের প্রায় ২৫ টি সিন্ডিকেটের কথা উঠে আসে, যারা ভাড়াটিয়া আর ছদ্মবেশি প্রতারক ভিক্ষুকদের চালায়। মাসিক বা রোজ চুক্তিতে চক্রগুলো ভিক্ষুক সংগ্রহ করে। সিন্ডিকেটে না থাকলে পাওয়া যায় না ভিক্ষার সুবিধামত জায়গা, সেই সাথে চাঁদাবাজিসহ আরো অনেক উৎপাত তো আছেই। সিন্ডিকেটগুলোই পথশিশুদের ধরে ধরে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভিক্ষায় নামিয়ে দিচ্ছে।
এলাকাভিত্তিক এসব সিন্ডিকেট ঠিক করে দেয় কে কোথায় বসে ভিক্ষা করবে। হাইকোর্ট মাজার, গাবতলী, মহাখালী, ফার্মগেট, গুলিস্তান, গুলশান মোড়, বাংলামোটর, শাহবাগের মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যারা অসুস্থ সেজে ভিক্ষা করে তাদের আয় সবচেয়ে বেশি। মাসিক গড় করলে অন্তত ১৫ হাজার টাকার কম নয়। আয় বেশি হলেও বেশিরভাগটাই নিয়ে যায় অমুক-তমুক ভাইয়েরা। আর এসব সিন্ডিকেটের ভাইদের কেউ কেউ ঢাকায় বাড়ি-গাড়িও করে ফেলছে ভিক্ষার টাকায়।
আর এভাবেই ঢাকায় বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। কিছু দিন আগে হৃদয় নামের এক ছদ্মবেশি ভিক্ষুকের খবর আমরা দেখেছি গণমাধ্যমে, যে কিনা সুযোগ বুঝে ছিনতাই করতো। ভিক্ষুক ছদ্মবেশে অনেকে আবার মাদক সিন্ডিকেটও গড়ে তুলছে।
দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা কত তার কোন সরকারি হিসেব নেই। তবে ২০২০ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শুধু রাজধানীতে নিয়মিত ভিক্ষা করে ৫০ হাজার ভিক্ষুক। বেসরকারি জরিপে এই সংখ্যা আবার আড়াই লাখ। যাদের দৈনিক আয় ২০ কোটি আর মাসিক আয় ৬০০ কোটির কাছাকাছি।
সরকার বহু বছর আগেই সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০১১ সালে সর্বশেষ দশ হাজার ভিক্ষুকদের ওপর জরিপ চালিয়ে, তাদের মধ্য থেকে দুই হাজার ভিক্ষুককে নিজ জেলায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬৬ জনকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য রিক্সা, ভ্যান, সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হয়েছিলো, কিছুদিন পর তারা সেগুলো বিক্রি করে আবার ভিক্ষায় নেমেছে। এভাবেই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়।
এরপরও ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় সমাজসেবা অধিদপ্তর। সেই প্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চার কোটি এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পাঁচ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ১২ কোটি বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রয়োজনের তুলনায় সহায়তার অংক অনেক কম হওয়ায় কাজ হয়নি তেমন কিছুই। অবশ্য এর আগে রাজধানীতে গুলশান, বনানী, এয়ারপোর্টসহ আরো বেশ কিছু এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। কয়েকদিন সব ঠিকঠাক চললেও পরে আবার সেই আগের চিত্র। এসব এলাকায় রাস্তার ধারে পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেও অন্তত ৫ জন ভিক্ষুকের দেখা মিলবে।
ভিক্ষা ব্যাপারটা কিছু মানুষের কাছে অভ্যাস বা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই আর্থিক সচ্ছল হওয়ার পরও পুরোনো অভ্যাস ছাড়তে না পেরে ভিক্ষা করেন। মানে আপনি তাকে যতো টাকা কিংবা সুবিধাই দেন না কেন, তারা একটা সময় সেই পুরনো পেশায় ফিরবেই। এটাকে সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বললে ভুল হবে না। কেন বলছি কারণ, বিনাশ্রমে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যারা অন্যের কাছে হাত পেতে টাকা আয় করতে অভ্যস্ত, তারা আর যাই করুক সারাদিন খেটে আয়-রোজগার করবে না এটাই স্বাভাবিক।
অন্যান্য দেশে সাহায্য চাওয়ার কিংবা ভিক্ষার ধরণটাও ভিন্ন। তারা মানুষকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে না। গান গেয়ে, গীটার বাজিয়ে কিংবা শারিরীক কসরত দেখিয়ে বা হকারের মতো কোন পণ্য বিক্রি করে আর্থিক সহয়তা চায়। তাও হাতে গোনা কয়েকজন। এখানে প্রতারণার যেমন কোন সুযোগ থাকে না তেমনি সম্মানহানি কিংবা অন্যের কাছে ছোট হওয়ার বিষয়টি থাকে না। অবশ্য আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে এই প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে। ভিডিওর একেবারে শেষ দিকে এসে একটা কথাই বলতে চাই…. আমাদের দেশে সবার আর্থিক অবস্থা এক নয়। দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা একে অপররে সহায়তায় এগিয়ে আসবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিক্ষবৃত্তি যখন অভিনয় আর প্রতারণার মাধ্যম হয়ে পড়ে তখন কিন্তু প্রকৃত সাহায্য প্রত্যাশীরাই বঞ্চিত হয়। প্রশ্নবিদ্ধ হয় মানবিকতা। ভিক্ষুকমুক্ত দেশ গড়তে না পারলেও প্রতারক আর ছদ্মবেশি ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়তে চলুন এগিয়ে আসি আমরা। সবাইকে ধন্যবাদ, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Begging or acting?
Greetings everyone!
“Beggar” By hearing the word, surely a doubt arises in the mind. If I am not mistaken, the suspicion is very much like this – is it really a beggar or a fraud? Why do we have such doubts? Why do not we feel to believe? What is the reason?
I am sharing a little story! Of course, it is better to call it a real experience rather than a story. Because this is my own story.
Every day on my way home after work, I often see a man knocking on the car window asking for help. I tried to help as much as possible by lowering the window glass several times. You would probably do the same if you saw each other face to face. Because, the person whose whole body including hands and feet is constantly shaking, difficult to breathe, he has no chance to earn income by working. Tell me what other ways to help people! You must be having a little trouble listening to the description, right?
We are used to seeing such images in many places in Bangladesh including Dhaka, the surprise in my case is somewhere else? It is better to call him a skilled actor than to call him a beggar.
Listen to why the actor is saying… One day, I suddenly find out that the man can walk completely normally. He does not have any disease of such tremors. He even drinks tea and chats like a normal person in a tea shop. Once again seeing the car at the signal, the tremors started. And the whole performance is so perfect, there is no way to understand, at least I couldn’t catch it. Now tell me, who do you believe?
When a healthy person comes to ask for help disguised as a sick person, and when we realize that, we lose faith in beggars. Naturally, I start avoiding those who need help as frauds.
Actually, some syndicates work behind making begging an act. It is because of them that there are numerous beggars scattered in Dhaka city who seek financial help by pretending to be physically disabled and taking begging as a profession. Their daily income is also quite good.
In a 2018 investigative report in Manabzamin newspaper, there were about 25 syndicates in Dhaka city that run mercenaries and fraudulent beggars in disguise. Chakras collect beggars on monthly or daily contracts. If you are not in a syndicate, you cannot find a convenient place for begging, and there are many other sources, including extortion. The syndicates are holding the street children and making them beggars.
These local syndicates decide who will sit and beg where. Busy areas, like High Court Mazar, Gabtali, Mohakhali, Farmgate, Gulistan, Gulshan Mor, Banglamotor, Shahbagh have the highest income for those who dress up as sick. Monthly average is not less than 15 thousand takas. Even if the income is high, most of it is taken by so-and-so brothers. And some of the brothers of these syndicates are buying houses and cars in Dhaka with alms money.
And this is how the number of beggars is increasing in Dhaka. A few days ago, we saw the news of a disguised beggar named Hridoy in the media, who used to steal every opportunity. Many are also building drug syndicates in the guise of beggars.
There is no official count of the number of beggars in the country. However, according to the data of Social Services Department in 2020, 50 thousand beggars regularly beg in the capital. According to the private survey, this number is again two and a half lakh. Whose daily income is 20 crores and monthly income is close to 600 crores.
The government had taken the initiative to rehabilitate beggars many years ago under the Department of Social Services. In 2011, after surveying the last 10,000 beggars, out of them, 2,000 beggars were resettled in their own districts. But in the end only 66 people could be rehabilitated. After reviewing, it was found that those who were bought rickshaws, vans, sewing machines for rehabilitation and employment, after a few days they sold them and went back to begging. Thus the project was failed.
However, the Department of Social Services wants an allocation of Tk 450 crore for the rehabilitation of beggars. In that context, the government allocated four crores in the financial year 2019-20 and five crores in the financial year 2020-2021 and only 12 crores in the financial year 2022-23. As the amount of assistance is much less than the need, nothing has been done. However, before this, the government had taken the initiative to make several other areas beggar-free including Gulshan, Banani, Airport in the capital. Everything went well for a few days, but then it was the same again. Even if you stand on the roadside for five minutes in these areas, you will meet at least 5 beggars.
Begging has become a habit or addiction for some people. Many beg even after being financially well off, unable to give up their old habits. It means that no matter how much money or benefits you give them, they will return to their old profession at some point. It will not be wrong to call it a psychological disorder. Why am I saying this because it is natural that those who are used to earn money by taking refuge in lies, without work, will not earn any income by working all day long whatever they do.
The pattern of asking for help or begging in other countries is also different. They do not emotionally blackmail people. Seeks financial support by singing, playing the guitar or performing physical exercises or selling a product like a hawker. Only a handful of people. Here there is no opportunity for cheating and there is no question of dishonor or inferiority to others. However, this practice has slowly started in our country too.
At the very end of the video, I want to say one thing… In our country, everyone’s financial condition is not the same. As citizens of the country, it is natural that we will come forward to help each other. But when begging becomes a means of acting and cheating, only those who really hope for help are deprived. Humanity is questioned. Even if we can’t build a beggar-free country, let’s move forward to build a society free from fraudsters and beggars. Thank you all, stay healthy, stay well.