সালটা ২০২৩, বছরের শুরুতেই মমিনুল সাহেবের কারখানায় কাঁচামালের বড় একটা লট ঢোকার কথা। চীন থেকে কাঁচামাল এনে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র বানান তিনি। পোর্টে জাহাজ চলে এসেছে। ডলার দিয়ে কাঁচামাল খালাস করতে হবে। কিন্তু ডলার পাচ্ছেন না কোথাও। বেশি টাকা দিয়েও ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। একদিকে কাঁচামালের অভাবে কারখানায় কাজ বন্ধ হবার দশা, অন্যদিকে বন্দরে আটকে থাকা মালের প্রতিদিনের বাড়তি ভাড়া। পেমেন্ট না পেয়ে কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও চিন্তায়। গত বছরের শুরুতে কমবেশি সব ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে ব্যবসা করেন।
দেশে ডলার সংকট, ব্যবসা মন্দা, এলসি নাই, আমদানি বন্ধ, জিনিসের দাম নাগালের বাইরে – এসব কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত আমরা। তারপরও কিছুই করার নাই, কারণ বিদেশী এই মুদ্রা দিয়েই চলে গোটা বিশ্ব বাণিজ্য।
আমেরিকান ডলার নিয়ে সারাবিশ্ব বাণিজ্য করার কারণ কী? অন্য দেশের মুদ্রার কি বিশ্ব বাজারে কোন দাম নাই? গ্লোবাল কারেন্সি হতে হলে কী কী রিকোয়ারমেন্ট লাগে? ডলারই কীভাবে এই জায়গা দখল করলো? এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর থাকবে আজকের ভিডিওতে।
শুভেচ্ছা সবাইকে।
ধরা যাক, চীন থেকে আপনি কিছু প্রযুক্তি পণ্য আমদানী করলেন। মূল্য পরিশোধে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি টাকায় মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন না। প্রয়োজন হবে ইউএস ডলারের। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ছোট্ট একটি বাণিজ্য থেকেও লাভবান হচ্ছে আমেরিকা, তাও আবার ব্যবসায় কোনভাবে যুক্ত না থেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কথা বাদ দিলাম, জলদস্যুরাও ডলার ছাড়া অন্য কারেন্সিতে মুক্তিপণ নেয় না। কিছুদিন আগে সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি একটি জাহাজকে জিম্মি করে ডলারেই মুক্তিপণ দাবি করেছিলো। এখন অন্যান্য মুদ্রাকে পেছনে ফেলে মার্কিন ইউএস ডলার কিভাবে গ্লোবাল কারেন্সি হলো, সে গল্পে আসি।
মার্কিন ডলার বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মুদ্রা। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে ডলার ব্যবহৃত হয়। এক কথায়, এটাই বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মানি।
ডলার কিভাবে সব মুদ্রার মোড়ল হয়ে উঠল, সেই কারণ জানতে চলুন অর্থের প্রকারভেদটা জেনে নেই।
মানি বা অর্থকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়; কমোডিটি মানি, রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি এবং ফিয়াট মানি। এখানে ‘কমোডিটি’ বলতে ‘পণ্য’ বোঝানো হচ্ছে।
প্রাচীনকালে স্বর্ণ বা রূপার বিনিময়ে বাণিজ্য করা হতো। এই দুইটা জিনিসের সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে, এগুলোকে পুড়িয়ে গলিয়ে ফেললেও এর মূল্যমানের কোন পরিবর্তন হয় না। মানবসভ্যতার ইতিহাসের একটি বড় সময় স্বর্ণ বা রূপার বিনিময়ে বাণিজ্য হয়েছে। ইউরোপে প্রথম কাগুজে মুদ্রা ছাপানো শুরু হয়। যেটাকে বইয়ের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘রিপ্রেজেন্টিটিভ মানি’। খালি চোখে কাগুজে মুদ্রার কোন দাম নাই। মনে হবে স্রেফ একটা কাগজের টুকরা।
কিন্তু এই কাগুজে মুদ্রার মাধ্যমে যখনই স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলো, তখনই সাধারণ কাগজের টুকরাটি হয়ে উঠে অসাধারণ। সেই থেকেই মজুদকৃত স্বর্ণ ও ছাপানো কাগজের মুদ্রার মূল্যমান সমন্বয় করে আসছে প্রতিটা দেশ। এভাবে কমোডিটি মানি ও রিপ্রেজেন্টিটিভ মানির মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়।
এবার আসি আসল ব্যাখ্যায়। ডলার গ্লোবাল কারেন্সি হয়ে উঠার মূল কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেসময় সামরিক সরঞ্জাম আর রসদ কিনতে ব্রিটেনসহ অন্যসব মিত্রশক্তি নির্ভর করতো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়ার আগ পযর্ন্ত মিত্রদের কাছে স্বর্ণের বিনিময়ে সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ মজুদ বেড়ে যায়। তখন বিশ্বের মোট মজুদকৃত স্বর্ণের প্রায় তিনভাগের দুইভাগ যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। এই পরিস্থিতি টের পেয়ে ১৯৪৪ সালে মিত্রপক্ষের ৪৪টি দেশ মিলে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি হলো, মার্কিন ডলারকে ইচ্ছেমতো স্বর্ণে রূপান্তরিত করা যাবে। উদ্দেশ্য ছিলো- বিশ্ব অর্থনীতিকে অন্তত কিছুটা হলেও উন্মুক্ত রাখা।
১৯৫০ ও ১৯৬০–এর দশকে যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে। সেসময় তারা নিজেদের মজুদকৃত মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। এতে মার্কিন স্বর্ণ মজুদ কমতে থাকে। একদিকে স্বর্ণের মজুদ কমছে আর অন্যদিকে, ভিয়েতনাম যুদ্ধ আর প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের গ্রেট সোসাইটি’র মতো বৃহৎ প্রকল্পে অর্থ যোগান দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণে ডলার ছাপতে শুরু করে। ফলে ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে থাকে।
প্রেসিডেন্ট নিক্সন ক্ষমতায় এসে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ সালে নিক্সন ঘোষণা করেন, এখন থেকে মার্কিন ডলারকে আর স্বর্ণে রূপান্তর করা যাবে না। এ ঘোষণায় বিশ্ব অর্থনীতি বিশাল এক ধাক্কা খায়। অর্থাৎ, অন্য কোন দেশের আর স্বর্ণ কিনে মজুদ করার উপায় থাকে না, বরং যে কোন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে এখন ডলারেরই মজুত থাকতে হবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ মজুদে হাত দেয়ার আর কোন উপায় থাকলো না। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে এমন কোন অর্থনৈতিক শক্তিও ছিল না। এ ঘটনাকে ‘নিক্সন শক’ নাম দেয় মিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আধিপত্য ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সিদ্ধান্ত যে সেসময় শতভাগ সফল হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত নিঃসন্দেহেই বলা যায়।
নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, তবে কি মার্কিন ডলারের একক আধিপত্য কখনোই শেষ হবে না? সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে ইউরো, চীনা ইউয়ানের কথা প্রায়ই উঠে আসে। তবে আমাদের মনে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা জাগায় ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এমন এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যেটার উৎপাদন, সংরক্ষণ কিংবা বিনিময় প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার সরকার বা ব্যাংক যুক্ত নয়। এটি বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। ভার্চুয়াল মুদ্রা হওয়ায় ক্রিপটোকারেন্সির মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করা গেলেও এটা ব্যাংক বা বা ওয়ালেটে রাখতে পারবেন না। ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে ব্লকচেইন এর মাধ্যমে। ব্লকচেইন হলো এমন একধরনের অটোমেটেড প্রযুক্তি, যেখানে তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই সম্পূর্ণ নিরাপদ উপায়ে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মানি সংরক্ষণ ও প্রেরণ করা যায়। ব্লকচেইন পদ্ধতির শুরুটা হয় ১৯৮০ সালে। যখন ক্রিপটোকারেন্সিতে লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য একটি ব্লকে রেকর্ড থাকে। ২০২০ সালে প্রতিবেশি দেশ ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধতা পেলেও বাংলাদেশে এটি এখনো অবৈধ।
অনেক কিছু তো বললাম, এখন আপনারাই বলেন ডলার পরবর্তী গ্লোবাল কারেন্সি কী হতে পারে? ক্ষমতার হাতবদল হয়ে অন্য কোন রাষ্ট্রের হাতেই যাবে নাকি স্বর্ণ ও ডলারের পর নতুন কোন বৈশ্বিক কারেন্সি ব্যবহার করবে বিশ্ব?
ধন্যবাদ সবাইকে
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Is the Era of the Dollar Over?
The year is 2023. At the beginning of the year, Mr. Mominul was expecting a big shipment of raw materials for his factory. He imports raw materials from China to manufacture electronic items. The ship has arrived at the port, and he needs dollars to clear the shipment. But he can’t find dollars anywhere. Even paying a higher price isn’t helping. On one hand, his factory is at risk of stopping production due to a lack of raw materials. On the other hand, he is paying extra charges daily for the goods stuck at the port. The supplier is also worried because they haven’t received payment.
Many business owners faced a similar situation earlier this year, especially those who import raw materials from abroad.
We are tired of hearing about the dollar crisis, business slowdowns, LC issues, import bans, and skyrocketing prices. But there is nothing we can do. The world trade system runs on this foreign currency.
Why does the whole world trade in US dollars? Don’t other currencies hold any value in the global market? What does it take for a currency to become global? How did the dollar achieve this position?
We will answer these questions in today’s video. Greetings to all of you!
Let’s assume you imported some tech products from China. Naturally, you cannot pay in Bangladeshi Taka. You will need US dollars. From a small trade between Bangladesh and China, the US earns a profit, even though they aren’t directly involved. Let’s not even get into international trade. Even pirates refuse to accept ransom in anything but dollars.
A few days ago, Somali pirates hijacked a Bangladeshi ship and demanded ransom in US dollars. If you’re curious about such unbelievable pirate stories, you can check out our video on Somali pirates.
Now, let’s explore how the US dollar overtook all other currencies to become the global standard.
The US dollar is the most powerful currency in the world. Over 90% of international trade transactions use dollars. It is essentially the world’s main reserve currency.
To understand how the dollar became the dominant currency, let’s first learn about the types of money.
Money is divided into three types: Commodity Money, Representative Money, and Fiat Money. Here, “commodity” refers to tangible goods.
In ancient times, trade was conducted using gold or silver. The biggest advantage of these metals is that their value doesn’t change even if melted down. For a large part of human history, trade relied on gold or silver. In Europe, paper money was first introduced, known as “Representative Money” in textbooks. At first glance, paper money might seem worthless—just a piece of paper.
But when paper money was tied to the value of gold, it became valuable. Countries started balancing the value of their printed paper money with their gold reserves. This created a close relationship between Commodity Money and Representative Money.
Now, let’s get to the main explanation.
The dollar became a global currency because of World War II. At that time, Britain and other Allied Powers relied heavily on the US for military equipment and supplies. Before the US entered the war, they sold military goods and supplies to the Allies in exchange for gold. This increased America’s gold reserves significantly. At one point, the US held about two-thirds of the world’s total gold reserves.
Recognizing this situation, in 1944, 44 Allied countries decided on a new system. They agreed that US dollars could be converted to gold at will. The goal was to keep the global economy somewhat open.
In the 1950s and 1960s, Western European countries started recovering from the war. They began exchanging their US dollar reserves for gold from the US. As a result, US gold reserves started depleting. Meanwhile, to fund the Vietnam War and massive projects like President Lyndon Johnson’s “Great Society,” the US Federal Reserve began printing large amounts of dollars. This disrupted the balance between dollars and gold.
When President Nixon took office, he made a groundbreaking decision. In 1971, Nixon announced that the US dollar could no longer be converted into gold. This decision shocked the global economy. From then on, no country could purchase gold reserves. Instead, countries needed to stockpile dollars to engage in international trade.
This protected the US gold reserves from being depleted. At that time, no other economic power was strong enough to challenge the US. This event was labeled the “Nixon Shock” by the media. It was a strategic move by the US to maintain its global economic dominance. Looking back, it’s clear that this decision was highly successful.
You might now wonder: will the dominance of the US dollar ever end?
Possible alternatives like the Euro or the Chinese Yuan are often discussed. However, cryptocurrencies give us the most hope.
Cryptocurrencies are a type of digital currency not controlled by any government or bank. They operate through decentralized computer networks. As a virtual currency, cryptocurrencies can be used for buying and selling goods, but you cannot keep them in a traditional bank or wallet.
Cryptocurrencies work through blockchain technology. Blockchain is an automated process that securely stores and transfers virtual money like Bitcoin without any third party. Blockchain technology began in the 1980s. In cryptocurrency transactions, all information is stored in blocks. In 2020, neighboring India legalized cryptocurrency, but it is still illegal in Bangladesh.
I have said a lot. Now, it’s your turn to tell me: what could be the next global currency after the dollar? Will power shift to another country, or will the world adopt a new type of global currency after gold and the dollar?
Thank you all. Stay healthy, stay well.
“Thanks for sharing such valuable information!”